রাজকুমার ঘোষ -
“ছোট্ট ছেলে দুষ্টুমি করবেই, ওগোঃ তুমি ওকে আশ্রমে কেন দিচ্ছ ?” মায়ের কোন
কথাই বাবা শোনেননি । সাল ১৯৮৭, বাবা আমাকে উলুবেড়িয়ার একটি আশ্রমে পাঠিয়ে
দিয়েছিলেন । বাবা একটুও বুঝল না ছেলেটি তার মা’কে ছেড়ে কি করে থাকবে? আশ্রম
সংলগ্ন কল্যানব্রত স্কুলে আমি পরীক্ষা দিয়ে ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়েছিলাম ।
বয়সে আমি খুবই ছোট, প্রচন্ড কষ্ট আর হতাশা নিয়ে একটা অচেনা অজানা পরিবেশে
চলে এলাম, সেখানে গিয়ে দেখলাম আমারই মতো আরো অনেক ছেলে আছে, আর আছে হিটলার
রুপী মাস্টারমশাই, যার মধ্যে ছেলেটি তার স্বপ্নের দৈত্য-দানবদের ছায়া দেখতে
পেত । ছেলেটি বুঝে উঠতে পারে না সে কি করবে ?... তার চেনা জগৎ যে, তার মা…
যাকে ছাড়া সে একটুও ভাবতেই পারে না ।
মাস্টারমশাইকে আমি খুব ভয় পেতাম । উনি খুব কড়া প্রকৃতির মানুষ ছিলেন, এছাড়াও আশ্রমের মূল অভিভাবক ছিলেন । একটু ভুল হলেই উনি শাস্তি দিতেন, মারধোরও করতেন । উনি অবসর নেবার পর স্থির করেছিলেন একটি আশ্রম করবেন এবং তিনি তা করেছিলেন। কল্যানব্রত স্কুলের সাথে তার এই আশ্রম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে । আশ্রম বা স্কুলের কোন ভালো কাজ বা আনন্দ-অনুষ্ঠান উনি নিজের দায়িত্বে করতেন । সমস্ত পরিকল্পনা ও আয়োজন ওনার মস্তিস্কপ্রসূত । আশ্রমকে নিয়ে উনি অনেক স্বপ্ন দেখতেন, একটা আদর্শ বিদ্যামন্দির গড়ার স্বপ্নে ব্রতি হয়েছিলেন, সেই উদ্দেশ্যে তিনি ছিলেন একমাত্র কান্ডারী। উনি ভীষণ রাসভারী ছিলেন, শুধু ছাত্ররাই নয়, আশ্রম বা বিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত সকলেই ওনাকে বেশ সমীহ করত । ওনার নিয়ম ছিল বজ্রের মত কঠিন, কোন ব্যাপারে উনি সিদ্ধান্তে এলে তা চূড়ান্ত হিসাবেই গণ্য হত । শিক্ষক দিবসে উনি শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে মহামিলন মেলার আয়োজন করতেন। আমরা সেই মেলায় খুব মজা করতাম ।
২০১৪ সালের অক্টোবরে আমি আশ্রমে গিয়েছিলাম, মাস্টারমশাই সেখান থেকেও অবসর নিয়ে নিয়েছেন... উনি যে আশ্রমে থাকতেন সেই আশ্রমের ঠিকানা সংগ্রহ করে মাস্টার মশাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম । দেখলাম বয়স ওনাকে চেপে ধরেছে ঠিকই, কিন্তু ওনার গলার আওয়াজে সেদিনও আমার বুকটা কেমন কেঁপে উঠেছিল। কাছে গিয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম, “চিনতে পারছেন স্যার?”... উনি মুচকি হাসলেন, তারপর অবাক করে দিয়ে বললেন, “প্রথম দিন লাল টুপি পরা আর সবুজ মেরুনের সোয়েটার গায়ে সেই বাচ্চা ছেলেটা আমাকে প্রণাম করতে এসেছিল আর আমি কড়া করে বকে দিয়েছিলাম, সেই ছেলের কি কান্না...” সেদিনও উনি প্রণাম নিলেন না । উনি বললেন, “ঈশ্বর আছেন তাকে বাদ দিয়ে আবার আমি কেন?” ... আমি কিছুই বলতে পারলাম না । আমার চোখের কোণ দিয়ে অবিশ্রান্ত ধারায় জল বেরিয়ে গেল, ইচ্ছা হলেও সেই জল মুছতে পারলাম না ।
মাস্টারমশাইকে আমি খুব ভয় পেতাম । উনি খুব কড়া প্রকৃতির মানুষ ছিলেন, এছাড়াও আশ্রমের মূল অভিভাবক ছিলেন । একটু ভুল হলেই উনি শাস্তি দিতেন, মারধোরও করতেন । উনি অবসর নেবার পর স্থির করেছিলেন একটি আশ্রম করবেন এবং তিনি তা করেছিলেন। কল্যানব্রত স্কুলের সাথে তার এই আশ্রম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে । আশ্রম বা স্কুলের কোন ভালো কাজ বা আনন্দ-অনুষ্ঠান উনি নিজের দায়িত্বে করতেন । সমস্ত পরিকল্পনা ও আয়োজন ওনার মস্তিস্কপ্রসূত । আশ্রমকে নিয়ে উনি অনেক স্বপ্ন দেখতেন, একটা আদর্শ বিদ্যামন্দির গড়ার স্বপ্নে ব্রতি হয়েছিলেন, সেই উদ্দেশ্যে তিনি ছিলেন একমাত্র কান্ডারী। উনি ভীষণ রাসভারী ছিলেন, শুধু ছাত্ররাই নয়, আশ্রম বা বিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত সকলেই ওনাকে বেশ সমীহ করত । ওনার নিয়ম ছিল বজ্রের মত কঠিন, কোন ব্যাপারে উনি সিদ্ধান্তে এলে তা চূড়ান্ত হিসাবেই গণ্য হত । শিক্ষক দিবসে উনি শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে মহামিলন মেলার আয়োজন করতেন। আমরা সেই মেলায় খুব মজা করতাম ।
২০১৪ সালের অক্টোবরে আমি আশ্রমে গিয়েছিলাম, মাস্টারমশাই সেখান থেকেও অবসর নিয়ে নিয়েছেন... উনি যে আশ্রমে থাকতেন সেই আশ্রমের ঠিকানা সংগ্রহ করে মাস্টার মশাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম । দেখলাম বয়স ওনাকে চেপে ধরেছে ঠিকই, কিন্তু ওনার গলার আওয়াজে সেদিনও আমার বুকটা কেমন কেঁপে উঠেছিল। কাছে গিয়ে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম, “চিনতে পারছেন স্যার?”... উনি মুচকি হাসলেন, তারপর অবাক করে দিয়ে বললেন, “প্রথম দিন লাল টুপি পরা আর সবুজ মেরুনের সোয়েটার গায়ে সেই বাচ্চা ছেলেটা আমাকে প্রণাম করতে এসেছিল আর আমি কড়া করে বকে দিয়েছিলাম, সেই ছেলের কি কান্না...” সেদিনও উনি প্রণাম নিলেন না । উনি বললেন, “ঈশ্বর আছেন তাকে বাদ দিয়ে আবার আমি কেন?” ... আমি কিছুই বলতে পারলাম না । আমার চোখের কোণ দিয়ে অবিশ্রান্ত ধারায় জল বেরিয়ে গেল, ইচ্ছা হলেও সেই জল মুছতে পারলাম না ।
No comments:
Post a Comment