রাজকুমার ঘোষ -
অ্যাপয়েণ্টমেন্ট লেটার হাতে পেয়েই হলদিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । ঠিক
সকাল ৬.৩০ টায় হাওড়া থেকে হলদিয়া মেন লোকালে উঠে পড়লাম । ট্রেনে আমার
বিপরীত দিকে একজন বসেছিল, ভাগ্যক্রমে আমরা দু’জনেই একই পথের যাত্রী, সেটা
জানতে পারলাম আড়াই ঘন্টা পর ট্রেনটি যখন হলদিয়া পৌছল । একই সঙ্গে আমরা
আসলাম অথচ পরিচয় না থাকার দরূন একে অপরের দিকে সন্দেহ ও বিশ্বাসের মাঝামাঝি
চাওনি নিয়েই আড়াই ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম । এর নাম সঞ্জীব, পরে আমার এক ভালো
বন্ধু হয়েছিল । হলদিয়া স্টেশনে ট্রেন থেকে নামার পর একে অপরকে গন্তব্যস্থল
জিজ্ঞাসা করার সাথেই আলাপ । সেখান থেকে আমরা দু’জনে সকাল ১০টার আগেই
কোম্পানীর মেন গেটে পৌছে গেলাম । এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, আমাদের এই কোম্পানী
একটা বড় ব্যাটারী কোম্পানী । হলদিয়াতে বিরাট জায়গা নিয়ে এই ফ্যাক্টরী ।
অনেকগুলো শেড আর অফিস নিয়ে বেশ সুন্দর ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ভাবে সাজানো ।
কোম্পানীর মেন গেটে সিক্যুরিটি গার্ডকে নিজেদের পরিচয় দিয়ে ভেতরে যখন
ঢুকলাম, এক মুহুর্তে ভাবলাম যে আমরা বিদেশে চলে এসেছি । বেশ অবাক হয়ে
গিয়েছিলাম । এরপর একজন সিনিয়র অফিসারের সাথে কথা বলে আমাদের দু'জন কে
ওয়েটিং রুমে নিয়ে যাওয়া হল । সেখানে আমাদের মত আরো ৫জন ছিল । এদের নাম
কার্ত্তিক, ত্রিদিব, জয়ন্ত, বিবেক ও প্রসেঞ্জিত । অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই
আমরা একে অপরের সাথে দারুনভাবে পরিচিত হয়ে গেলাম । সেদিন থেকেই আমরা একসাথে
কাজ করা, কোম্পানীর আবাসনে থাকা, খেতে বসা, গল্প আড্ডা সবকিছু ...... ওঃ
এককথায় দারুন কাটিয়েছিলাম সেইসময় ।
আমরা ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ করতাম কোম্পানীর ক্যান্টিন এ । বিশাল হলঘ রের মতো, অনেকগুলো লম্বা ডাইনিং টেবিল নিয়ে সাজানো ক্যান্টিন রুমটা বেশ জমজমাট হয়ে থাকতো । লাঞ্চের সময় কোম্পানীর অফিসার থেকে শুরু করে লেবার সবাই আসত । আমরাও ছিলাম এদের মধ্যে । আর আসত সে ......... হ্যাঁ, দুজন মেয়ে আসত, তার মধ্যে একজন ফাটাফাটি দেখতে ছিল । সেই মেয়েটির উপস্থিতি আমরা বন্ধুরা মিলে ভীষণভাবে উপভোগ করতাম । লাঞ্চ টাইমটা আমাদের কাছে গোল্ডেন টাইম ছিল । ওই সময়টা আমরা ভাবতাম... 'হায়রে সখা, কখন দেবে দেখা !'...... তা লাঞ্চের সময় মেয়ে দুটো আসতো, আমরা তো দেখতামই, ওরাও আমাদের দিকে লক্ষ্য রাখত । মাঝে মাঝে চোখে চোখ পড়ত, তখনই মনে হতো কি যেন বলতে চায় মেয়েগুলো । কিন্তু আমাদের টার্গেট ছিল ওই মেয়েটি । আমাদের মধ্যে জয়ন্তর একটু ঢিলে ব্যাপার ছিল, সে প্রায়ই ছুকছুক করত মেয়েটিকে দেখলে, এমন কি প্রপোস করবে বলে ঠিক করে ফেলল, কিন্তু বুকের পাটার বড়ই অভাব । আমাদের মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জও হয়ে গেল, কে আগে কথা বলতে পারে মেয়েগুলোর সাথে, বলা যেতে পারে, কে পটাতে পারে ।
এইভাবে বেশ কিছুটা দিন কেটে গেল, মেয়েগুলোর সাথে আলাপ করার ইছাও হচ্ছিল, কিন্তু সাহস করে এগোনোর ব্যাপারে কেউ নেই । লাঞ্চের সময় আমরা বন্ধুরা একটা টেবিলে একসাথে বসতাম । মেয়েদু'টি বেশ দূরে একটা টেবিলে বসত । কোন একটা দিন ক্যান্টিন রুমটা বেশ ফাঁকা ছিল । আমরা ছিলাম আর ওরা ও ছিল । ওরা যে টেবিলে বসে ছিল সেখানে অন্য কেউ ছিল না, এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা আমিই নিয়ে নিলাম । আমি আমার খাবারের থালাটা নিয়ে ওদের টেবিলে চলে এলাম । ওদের অনুমতি নিয়ে ঠিক উল্টোদিকে বসে পড়লাম । আমি নিজে থেকেই আলাপ করলাম । জানা গেল, মেয়েটির নাম রূপালী...... বাঃ সুন্দর নাম, ভেবে ফেললাম... 'রূপালী, তোমার রূপের ছটায় ভিজিয়ে দাও এই হৃদয় ।' যাই হোক, রূপালী ও পাশে থাকা মেয়েটা কোম্পানীর অফিসে ক্লারিক্যাল এর কাজ করে ।
এরপর আমি রূপালীদের অনুমতি নিয়ে আমার বন্ধুদেরও এই টেবিলে ডেকে নিলাম । প্রত্যেকে যে যার মতো করে আলাপ পর্ব শেষ করে নিল, বিশেষ করে জয়ন্ত, ও যে কি করবে,ভেবে পাচ্ছিল না । আমাকে কত রকম ভাবে ধন্যবাদ জানাবে তাও গুলিয়ে ফেলছিল । এইভাবে বেশ কিছুটা দিন আরো কেটে গেল, রূপালীদের সাথে বন্ধুত্ত্ব আরো জমে উঠেছিল । লাঞ্চের সময়টা গোল্ডেন টাইম থেকে প্লাটিনাম টাইম হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু জয়ন্ত, সে যে মনে মনে রূপালীকে নিয়ে বিরাট কিছু ভেবে ফেলেছে । রূপালীকে সে তার ভালোবাসার কথা জানাতে চায় । কিন্তু সেই বুকের পাটা !! ... এদিকে হলদিয়ায় আমাদের থাকার মেয়াদ ১ মাস থেকে আর মাত্র ৭ দিনে এসে ঠেকেছে । অগত্যা জয়ন্ত আমাকেই গুরুদায়িত্ব দিল যে ওদের ব্যাপারটা সেটিং করে দিতে হবে । সেই মতো একদিন প্ল্যান করে রূপালীকে জানানো হল, আসছে রবিবার বিকালে, সিনেমা হলের পাশে যে পার্কটা আছে সেখানে যেন অপেক্ষা করে । কেন জানিনা রূপালীও রাজি হয়ে গেল ।
সেইদিন রবিবার, যথারীতি আমরা সবাই সারাদিন এক সাথে আনন্দে কাটালাম, দুপুরের শোয়ে শাহরুখ খানের 'জোশ' সিনেমা দেখে মনে বেশ জোশ নিয়ে বিকাল ৫ টায় আমরা পার্কের কাছে চলে এলাম । দেখলাম রূপালীও চলে এসেছে । জয়ন্ত ও আমার বাকি বন্ধুরা কেউ আর পার্কে ঢুকল না, আমি ঢুকলাম পার্কে বলির পাঁঠা হতে । রূপালীর কাছে চলে এলাম । নিজেদের মধ্যে কথা বললাম বেশ কিছুক্ষন । তারপর মনে সাহস নিয়ে জয়ন্তর ব্যাপারটা আস্তে আস্তে বেশ অস্বস্তি নিয়ে জানালাম রূপালীকে এবং ওকে এই নিয়ে ভাবার জন্য জোর দিলাম । এরপর ৩-৪ মিনিট কোন কথা নেই, রূপালীকে খুব গম্ভীর হয়ে যেতে দেখলাম । ওর ফর্সা গাল দুটো বেশ লাল-লাল মনে হতে লাগলো । আমার নিজেকে তখন খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল । পার্কের এত কোলাহলও তখন আমার কানে আসছিল না । ভাবছিলাম সারাদিন ফুর্তি করার পর রবিবারের এই দিনটা পড়ন্ত বেলায় মাঠে মারা গেল । এতদিন যে হলদিয়ায় কাটালাম সেটাও গেল আর কি ! জয়ন্তর উপর ভীষণ রাগ হচ্ছিল । কিন্তু আমার সমস্ত দুশ্চিন্তাকে ভুল প্রমাণ করে রূপালী বেশ অভিমানের সাথে জোর গলায় আমাকে বলল, “কিন্তু, আমি তো......তোমাকেই ভালোবাসি” ।
আমরা ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ করতাম কোম্পানীর ক্যান্টিন এ । বিশাল হলঘ রের মতো, অনেকগুলো লম্বা ডাইনিং টেবিল নিয়ে সাজানো ক্যান্টিন রুমটা বেশ জমজমাট হয়ে থাকতো । লাঞ্চের সময় কোম্পানীর অফিসার থেকে শুরু করে লেবার সবাই আসত । আমরাও ছিলাম এদের মধ্যে । আর আসত সে ......... হ্যাঁ, দুজন মেয়ে আসত, তার মধ্যে একজন ফাটাফাটি দেখতে ছিল । সেই মেয়েটির উপস্থিতি আমরা বন্ধুরা মিলে ভীষণভাবে উপভোগ করতাম । লাঞ্চ টাইমটা আমাদের কাছে গোল্ডেন টাইম ছিল । ওই সময়টা আমরা ভাবতাম... 'হায়রে সখা, কখন দেবে দেখা !'...... তা লাঞ্চের সময় মেয়ে দুটো আসতো, আমরা তো দেখতামই, ওরাও আমাদের দিকে লক্ষ্য রাখত । মাঝে মাঝে চোখে চোখ পড়ত, তখনই মনে হতো কি যেন বলতে চায় মেয়েগুলো । কিন্তু আমাদের টার্গেট ছিল ওই মেয়েটি । আমাদের মধ্যে জয়ন্তর একটু ঢিলে ব্যাপার ছিল, সে প্রায়ই ছুকছুক করত মেয়েটিকে দেখলে, এমন কি প্রপোস করবে বলে ঠিক করে ফেলল, কিন্তু বুকের পাটার বড়ই অভাব । আমাদের মধ্যে একটা চ্যালেঞ্জও হয়ে গেল, কে আগে কথা বলতে পারে মেয়েগুলোর সাথে, বলা যেতে পারে, কে পটাতে পারে ।
এইভাবে বেশ কিছুটা দিন কেটে গেল, মেয়েগুলোর সাথে আলাপ করার ইছাও হচ্ছিল, কিন্তু সাহস করে এগোনোর ব্যাপারে কেউ নেই । লাঞ্চের সময় আমরা বন্ধুরা একটা টেবিলে একসাথে বসতাম । মেয়েদু'টি বেশ দূরে একটা টেবিলে বসত । কোন একটা দিন ক্যান্টিন রুমটা বেশ ফাঁকা ছিল । আমরা ছিলাম আর ওরা ও ছিল । ওরা যে টেবিলে বসে ছিল সেখানে অন্য কেউ ছিল না, এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা আমিই নিয়ে নিলাম । আমি আমার খাবারের থালাটা নিয়ে ওদের টেবিলে চলে এলাম । ওদের অনুমতি নিয়ে ঠিক উল্টোদিকে বসে পড়লাম । আমি নিজে থেকেই আলাপ করলাম । জানা গেল, মেয়েটির নাম রূপালী...... বাঃ সুন্দর নাম, ভেবে ফেললাম... 'রূপালী, তোমার রূপের ছটায় ভিজিয়ে দাও এই হৃদয় ।' যাই হোক, রূপালী ও পাশে থাকা মেয়েটা কোম্পানীর অফিসে ক্লারিক্যাল এর কাজ করে ।
এরপর আমি রূপালীদের অনুমতি নিয়ে আমার বন্ধুদেরও এই টেবিলে ডেকে নিলাম । প্রত্যেকে যে যার মতো করে আলাপ পর্ব শেষ করে নিল, বিশেষ করে জয়ন্ত, ও যে কি করবে,ভেবে পাচ্ছিল না । আমাকে কত রকম ভাবে ধন্যবাদ জানাবে তাও গুলিয়ে ফেলছিল । এইভাবে বেশ কিছুটা দিন আরো কেটে গেল, রূপালীদের সাথে বন্ধুত্ত্ব আরো জমে উঠেছিল । লাঞ্চের সময়টা গোল্ডেন টাইম থেকে প্লাটিনাম টাইম হয়ে গিয়েছিল । কিন্তু জয়ন্ত, সে যে মনে মনে রূপালীকে নিয়ে বিরাট কিছু ভেবে ফেলেছে । রূপালীকে সে তার ভালোবাসার কথা জানাতে চায় । কিন্তু সেই বুকের পাটা !! ... এদিকে হলদিয়ায় আমাদের থাকার মেয়াদ ১ মাস থেকে আর মাত্র ৭ দিনে এসে ঠেকেছে । অগত্যা জয়ন্ত আমাকেই গুরুদায়িত্ব দিল যে ওদের ব্যাপারটা সেটিং করে দিতে হবে । সেই মতো একদিন প্ল্যান করে রূপালীকে জানানো হল, আসছে রবিবার বিকালে, সিনেমা হলের পাশে যে পার্কটা আছে সেখানে যেন অপেক্ষা করে । কেন জানিনা রূপালীও রাজি হয়ে গেল ।
সেইদিন রবিবার, যথারীতি আমরা সবাই সারাদিন এক সাথে আনন্দে কাটালাম, দুপুরের শোয়ে শাহরুখ খানের 'জোশ' সিনেমা দেখে মনে বেশ জোশ নিয়ে বিকাল ৫ টায় আমরা পার্কের কাছে চলে এলাম । দেখলাম রূপালীও চলে এসেছে । জয়ন্ত ও আমার বাকি বন্ধুরা কেউ আর পার্কে ঢুকল না, আমি ঢুকলাম পার্কে বলির পাঁঠা হতে । রূপালীর কাছে চলে এলাম । নিজেদের মধ্যে কথা বললাম বেশ কিছুক্ষন । তারপর মনে সাহস নিয়ে জয়ন্তর ব্যাপারটা আস্তে আস্তে বেশ অস্বস্তি নিয়ে জানালাম রূপালীকে এবং ওকে এই নিয়ে ভাবার জন্য জোর দিলাম । এরপর ৩-৪ মিনিট কোন কথা নেই, রূপালীকে খুব গম্ভীর হয়ে যেতে দেখলাম । ওর ফর্সা গাল দুটো বেশ লাল-লাল মনে হতে লাগলো । আমার নিজেকে তখন খুব অপরাধী মনে হচ্ছিল । পার্কের এত কোলাহলও তখন আমার কানে আসছিল না । ভাবছিলাম সারাদিন ফুর্তি করার পর রবিবারের এই দিনটা পড়ন্ত বেলায় মাঠে মারা গেল । এতদিন যে হলদিয়ায় কাটালাম সেটাও গেল আর কি ! জয়ন্তর উপর ভীষণ রাগ হচ্ছিল । কিন্তু আমার সমস্ত দুশ্চিন্তাকে ভুল প্রমাণ করে রূপালী বেশ অভিমানের সাথে জোর গলায় আমাকে বলল, “কিন্তু, আমি তো......তোমাকেই ভালোবাসি” ।
প্রকাশিত - দিগন্ত পত্রিকা, শারদীয়া সংখ্যা, ২০১৩
What a ending sir!!!...just awesome...
ReplyDeletethank you beta
Deleteহুম দাদা .... দারুণ ending ..
ReplyDeleteSir ses ta just marattok fatafati 😍
ReplyDelete