Monday, September 10, 2018

অণুগল্প - দুই মক্কেল


রাজকুমার ঘোষ -
যখনই দরকার হয় ওই দুমক্কেলের খোঁজ পড়ে। হ্যাঁ হরিশপুর গ্রামের দুই মক্কেলের দারুণ জনপ্রিয়তা লোকের বিপদ আপদে দুই মক্কেলের ভীষণ রকম নাম-ডাক।

একটু বিস্তারিত ভাবে বলা যাক, দুই মক্কেলের একজন হল শিবু ওরফে শিবপ্রসাদ হাজরা, গ্রামের মোস্ট ওয়ান্টেড রক্তদাতা, যার রক্তের গ্রুপ -নেগেটিভ। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা বা ক্লাব সংগঠন থেকে প্রায়ই ওর খোঁজ আসে। -নেগেটিভ রক্তের দরকার হলেই উনি বিনা দ্বিধায় চলে যান, কিন্তু বিনামূল্যে কখনই নয়। উনি রক্ত দিলেই সেখান থেকে ওনার পাওনা গণ্ডা বুঝে নিতেন। সকলে ওনার রক্তের জন্যই ওনাকে তোষামোদ করে চলে, কিন্তু মানুষ শিবুকে কেউই সেভাবে পছন্দ করে না, বরং আড়ালে আবডালে ওনার নিন্দাই করে। শিবু নিজের রক্ত দিয়ে অনেক টাকা উপার্জন করেছেন এবং বেশ সাচ্ছন্দেই জীবন কাটাচ্ছেন। প্রসঙ্গে শিবুর বক্তব্য, আমার রক্ত ফ্রিতে দেব কেন? আমি রক্ত দিয়ে অনেকের জীবন বাঁচাচ্ছি, এর জন্যই আমি অনেক পূণ্য সঞ্চয় করে নিচ্ছি। কিন্তু টাকা পয়সা আমার প্রয়োজন, সেটা না হয় রক্ত বেচেই...

যাই হোক, আর এক মক্কেল, ইদ্রিশ আলি। আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই বললেই চলে। কিন্তু এনাকেও মানুষের অনেক প্রয়োজন, কারণ সেই একই... এনারও রক্তের গ্রুপ -নেগেটিভ। তাই এনার বাড়িতেও অনেক প্রতিষ্ঠানের খুব ভীড়। ইদ্রিশ রক্ত দেন প্রয়োজন অনুযায়ী কিন্তু বিনিময়ে কারোর থেকে কিছুই নেন না। ইনি বলেন, এটা আমার ইমান... আল্লাহ আমাকে সেবার জন্য সুযোগ দিয়েছে, আমি তা কোনোমতেই হারাতে চাই না। যার কারণে ইদ্রিশ গ্রামেই মানুষের কাছে ভগবানতুল্য। খুব কষ্টের সংসারে ইদ্রিশ দর্জির কাজ করে সংসার চালান। অনেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও ইদ্রিশ তা গ্রহণ করেন না।

দুই মক্কেল একই গ্রামের হলেও একে অপরের সাথে যোগাযোগ নেই বললেই চলে। ওঁরা জানেন ওঁদের রক্তের গ্রুপের কথা এবং ওঁদের কার্যকারিতার কথা। কিন্তু ওপরওয়ালা চাইলেন আর ওঁদের মধ্যে অদ্ভুত ভাবে যোগাযোগ ঘটালেন। ইদ্রিশ মাঝেমাঝেই কাজের জন্য শহরে যান। কোনও একদিন ইনি পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মক ভাবে জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে রক্তের প্রয়োজন হল। কিন্তু গ্রামে শিবু ছাড়া যে আর কারোর -নেগেটিভ নেই। ইদ্রিশের পরিবার শিবুর দ্বারস্থ হবার মনস্থির করছে এমন সময় হাসপাতাল চত্বরে শিবুর আবির্ভাব। শিবু এসে বললেন, আমি ইদ্রিশের কথা শুনেছি, সবাই আমার কাছে এসেছেন রক্তের জন্য, বিনিময়ে পয়সাও নিয়েছি... কিন্তু আজ প্রথমবার আমি ভগবানের কাছে এসেছি আশীর্বাদ চাওয়ার জন্য... কোই গো ডাক্তার, যত পারেন রক্ত নিয়ে নিন আমার শরীর থেকে... ভগবান কে বুকে নিয়ে রাখতে চাই আমি... সকলে শিবুর একথা শুনে মুগ্ধ হয়ে হাততালি সাবাস দিল

প্রকাশিত - সবুজ কথা পত্রিকা,  বিশেষ সংখ্যা, ডিসেম্বর, ২০১৬

No comments:

Post a Comment