Monday, August 29, 2022

অণুগল্পঃ- পটলার "অবলা" প্রেম

 

~ রাজকুমার ঘোষ - ২৯.০৮.২০২২

বেশ সুন্দর করে পটলা জীবনটা একটু গুছিয়ে নিয়েছিল। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেয়ারার চাকরি পেয়ে রোজের সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা ডিউটি করে বাড়ি ফেরা। তারপর... না আড্ডা নয়। পটলা আড্ডা দেওয়া পছন্দ করে না। পটলার ফেভারিট টিভি সিরিয়াল৷ বাংলা সিরিয়াল পটলার খুব প্রিয়। বিশেষ করে নতুন একটি সিরিয়াল চালু হয়েছিল, "মিস অবলা"। সেই সিরিয়ালের মুখ্য ভূমিকায় থাকা নায়িকা প্রীতিকা মিত্র পটলার ভীষণ ফেভারিট। প্রীতিকাকে নিয়ে ভাবতেই ওর খুব ভালো লাগে। মনে মনে মিস অবলাকে নিজের বৌ ভেবে ফেলেছে অবিবাহিত পটলা। ওর বাবা-মা বিয়ে দিতে চেয়েছিল, কিন্তু পটলা বলেছে ও অবলার জন্যই অপেক্ষা করবে৷ এমন পাগলামিতে ওর বাবা-মা ভীষণ বিরক্ত। এই ভাবনা নিয়ে পটলা থাকে সর্বক্ষণ। নিত্যদিন ভিড়বাসেই পটলাকে অফিসে যাতায়াত করতে হয়। অনেক যাত্রী ভিড় বাসে যেতে যেতে অনেক রকম বিরক্তি প্রকাশ করে, কিন্তু অবলার স্বপ্নে বিভোর পটলার ডোন্ট ওরি মনোভাব। ওর মনে হয় ওকেও অবলা থুড়ি প্রীতিকা ভালোবাসে৷ এই ভাবাতেই ওর যেন স্বর্গসুখ। ভিড়বাসে পটলার পা'টা কেউ বুট চাপা দিয়ে থাকলেও পটলা সহ্য করে নেয় প্রীতিকার বিভোরতায়। উলটে সে সেই যাত্রীকে বলে, "না না, আমি কিছু মনে করিনি। এমন ভিড় বাসে হতেই পারে।" সেই যাত্রীর রিপ্লাই আসে, "আপনি মনে করলেও কিছু যায় আসে না। কে একেবারে হরিদাস পাল!"৷ পটলা আর কথা বাড়ায় না। এইভাবেই চলতে থাকে। কিন্তু গত চার-পাঁচ দিন পটলার মন ভীষণ খারাপ৷ বড় খবর এখন মিডিয়া জুড়ে, 'অভিনেত্রী প্রীতিকা মিত্র'র মৃত্যু।" তারপর থেকে পটলার দিনগুলো কেমন যেন অসহায়। শুধুই অবলাকে দেখতে পায়। ওর শুধু মনে হয় প্রীতিকা ওর সাথেই আছে। খবর কাগজের প্রথম পাতায় প্রীতিকার ছবি দিয়ে মর্মান্তিক খবর প্রকাশিত হয়েছে। অফিসের ব্যাগে সেই পাতাটা পটলা সঙ্গে নিয়ে রেখেছে। আর মনে মনে নিজের বৌকে হারিয়েছে ভেবে উদাস হয়ে থাকে। কারোর সাথে কথা বলে না। বাড়িতেও সে তার বাবা-মা'র সাথে কথা বলে না। আগের মত টিভিতে সিরিয়ালও দেখে না। কিন্তু জীবন চলতে থাকে। পটলাও তার রোজদিনের অফিসে যায়। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যে ৬টা পর্যন্ত ডিউটি। ভিড় বাসেই যায়-আসে। এরমধ্যেই কোনো একটা দিন পটলা ভিড় বাসে উঠেছে। অতি কষ্টে একটা সিটও পেয়ে বসেছে। --------  

ওর কেমন যেন মনে হয় ওকে কেউ অনুসরণ করছে। কদিন ধরে এই ব্যাপারটা আরও বেশী করে মনে হচ্ছে। ভিড় বাসে উঠে সিটে বসে আছে, এতো কোলাহল, এতো শব্দ। তারই মধ্যে কে যেন ওকে ডাকছে। ও শুধু তার কথাই যেন শুনতে পাচ্ছে। "পটলা ... ও পটলা... তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না... তুমি আমাকে কত ভালোবাসো... আমিও তো তোমাকে কত ভালোবাসি... একবার তাকাও আমার দিকে... আই লাভ ইউ পটলা"। পটলার মনে হলো, এ কন্ঠ তো অবলার থুড়ি প্রীতিকার। সে সপ্তাহ খানেক হলো মারা গেছে। তার মিষ্টি কন্ঠ সে কি করে শুনতে পাচ্ছে। বেশ ভয় পেয়ে গেল পটলা। তেষ্টায় ব্যাগের মধ্যে থেকে জলের বোতল বের করার সময় সে দেখতে পেল, যে কাগজটির প্রথম পাতায় প্রীতিকার ছবি দিয়ে মৃত্যু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সেই প্রীতিকার ছবিটা যেন হঠাৎ জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সেখান থেকেই প্রীতিকা পটলাকে অনবরত জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে আর বলছে, "আই লাভ ইউ পটলা"... দেখা মাত্রই পটলা আঁতকে উঠল। এমন ভিড় বাসেও পটলা চিৎকার করে উঠল, "ভূত... ভূত... প্রীতিকার ভূত... আমাকে বাঁচাও। না আমি তোমাকে ভালোবাসি না"...

  ------- আরে কি হলো মশাই, কোথায় ভুত। এই দিনের বেলায় ভিড় বাসে ভূত কোথায় দেখতে পেলেন? অদ্ভুত মানুষ তো। এই ভিড়ে সিটের মধ্যে ঝিমুচ্ছে আবার স্বপ্নও দেখছে। আবার কাকে নিয়ে! প্রীতিকাকে নিয়ে... যত্তসব পাবলিক  

পটলা বাসের মধ্যে সিট পেয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিল। আর স্বপ্নে প্রীতিকাকে দেখে যাতা অবস্থা। ভিড় বাসের মধ্যে অজস্র লোকের ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ওকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছে বলাই বাহুল্য। যথারীতি ওর গন্তব্য চলে এলো। কারোর দিকে না তাকিয়ে ও মাথা নিচু করে বাস থেকে নেমে গেল। অফিসের দিকে হাঁটতে হাঁটতে ব্যাগ থেকে সেই কাগজের প্রথম পাতাটা ছিঁড়ে রাস্তার মধ্যে থাকা ডাস্টবিনে ফেলে দিল  


2 comments:

  1. দুর্দান্ত গল্প .... আরও লিখুন

    ReplyDelete
    Replies
    1. নিশ্চয়ই লিখব ম্যাডাম।, 🙏💚

      Delete