Sunday, August 7, 2022

দিওয়ানা

 

দিওয়ানা
রাজকুমার ঘোষ 

অজয় স্বপ্নাকে প্রতিদিন দেখতে পেতো। ওর বাড়ির কাছেই স্বপ্নার বাড়ি, অথচ পরিচয় ছিল না। অজয়ের খুব ইচ্ছা স্বপ্নার সাথে কথা বলতে, কিন্তু সাহস করে কখনোই এগোতে পারে নি। কাজেই স্বপ্নাকে দেখা ছাড়া তার অন্য কোন উপায় ছিল না। রাস্তার ধারেই যখন স্বপ্নার বাড়ি, অজয় ওর বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় খুব চেষ্টা করত, যদি একটু তার ভালোলাগার মানুষটিকে দেখা যায়। সেই কবে থেকে স্বপ্নাকে দেখে যাচ্ছে, কিন্তু কথা হয়না, এমন কি স্বপ্না ওর দিকে তাকিয়েও দেখে না। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর এক কোচিং সেন্টারে অজয় স্বপ্নাকে দেখে একদম হকচকিয়ে যায় । সেদিনই স্বপ্নার সাথে প্রথম আলাপ এবং ওর স্বপ্নকন্যার নাম যে স্বপ্না সেটাও জানতে পারে। এরপর থেকে অজয়ের দিনগুলো বেশ ভালো ভাবে কাটতে থাকে, যাকে দেখার জন্য ও এত উদগ্রীব হয়ে থাকত, সে আজ ওর বেশ কাছের বন্ধু। অনেক গল্প হয়, কথা হয়। অজয়ের কাছে যেন সব কিছু স্বপ্ন বলে মনে হয়। অজয় তার সাধারণ জীবনে স্বপ্নার বন্ধুত্ব পেয়ে নিজেকে ভীষন ভাগ্যবান মনে করে। সে স্বপ্নাকে খুব ভালোবেসে ফেলে, কিন্তু সে কথা স্বপ্নাকে কখনোই জানাতে পারে না। ১৪ই জুন স্বপ্নার জন্মদিনে অজয় একটা উপহার নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিল। অজয় মনে মনে ঠিক করেছিল, "আজই আমার মনের মানুষকে মনের কথা বলেই ছাড়বো। ওর ভালোলাগার উপহার ওকে দিয়ে আমার মনে গোপন কথা উজার করে দেবো তোমাকে। স্বপ্না তুমি আমার স্বপ্নের স্বপ্না।"  উপহার হিসাবে অজয় নিয়ে গিয়েছিল স্বপ্নার ফেভারিট সোনু নিগমের একটি জনপ্রিয় মিউজিক অ্যালবাম ‘দিওয়ানা’। পুরো নতুন ডিভিডি প্যাক। বেশ দারুন হবে ব্যাপারটা, এই ভেবে সে স্বপ্নার কাছে গিয়েছিল, কিন্তু ও বলতে পারেনি, তবে ও স্বপ্নার বাড়িতে কম্পিউটারের মিউজিক প্লেয়ারে দিওয়ানার একটা গান স্বপ্নাকে শুনিয়েছিল... “দিল সে দিল তক, বাত পৌছি, মিলতে মিলতে সনম”। গানটা চলছিল যখন, অজয় মনের কথা বলার জন্য স্বপ্নার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল, বোধ হয় স্বপ্নাকে ও বোঝাতে পেরেছিল।
তারপর থেকে অজয় স্বপ্নার সাথে কথা বলতেও একটু অস্বস্তি বোধ করত। স্বপ্নার থেকে একটু দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করত। একদিন স্বপ্না অজয়কে বাড়িতে ডাকে। ... অজয় গিয়েছিল... স্বপ্না অজয়কে ওর ছাদের ঘরে ডেকে নিয়ে যায় তারপর অজয়ের হাতটি ওর ঠোঁটের স্পর্শে বুঝিয়ে দেয় ভালোবাসার উষ্মস্রোত বুঝি এবার ওর হৃদয় নদীর মাঝ বরাবর বয়ে যাবে। ওকে জড়িয়ে ধরে স্বপ্না বলে, ‘তুমি কি এইভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারো না’...
অনেক বছর হয়ে গেলো, হঠাৎ করে আজকের তারিখ ভাবতেই অজয় আরও উৎফুল্ল হয়ে পড়ল। হ্যাঁ, ১৪ই জুন, এই দিনেই তো স্বপ্নার জন্মদিন ছিল...অজয় সেই ‘১৪ই জুনে’র কথা মনে করছে। স্বপ্নার সেই বিগলিত দৃষ্টি আজও ওর স্মৃতিতে উদ্ভাসিত, একটা অক্সিজেনের যোগান দেয়। কিন্তু আজ স্বপ্না যে ওর পাশে নেই, সে যে অন্য কারোর ঘরণী, তাতেও নো প্রবলেম... অজয় ওর প্রিয় ছাদের ঘরে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে সেই বিশেষ দিনের সুখস্মৃতির কথা ভেবে নিজেকে সুখী মনে করছে, কিভাবে যেন সেই সুখস্মৃতি আজও তার কাছে সুখস্বপ্ন হিসাবেই আছে। এরপর অজয় বাড়ির বাইরে গিয়ে একটা সুন্দর কেক ও বেশ কটা রঙীন মোমবাতি গোপনে কিনে নিয়ে চলে এল। রাত্রি এগারোটায় বাড়ির সকলে ঘুমিয়ে যেতেই ও ছাদের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে মোমবাতিগুলো জ্বালিয়ে নিয়ে, ফেসবুকে ওর ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা স্বপ্নার প্রোফাইল থেকে একটি ছবি ডাউনলোড করে ল্যাপটপের স্ক্রিনে ফিট করে, এরপর নিজে কেক কেটে স্বপ্নার উদ্দেশ্যে, “শুভ জন্মদিন প্রিয়া... তুমি কাছে না থাকলেও আমি আছি ... আমি আছি আমার মত করে তোমার স্মৃতি সাথে নিয়ে। তুমি হারিয়ে যাওনি স্বপ্না, এখনো হৃদয়ের ছোট্ট প্রকোষ্ঠে তুমি উজ্জ্বল হয়ে আছো। খুব ভালো থাকো প্রিয় বন্ধু তুমি...” ল্যাপটপে চালানো স্বপ্নার সেই প্রিয় গানটি মুহুর্তটাকে আরও সুন্দর করে তুললো, “দিল সে দিল তক বাত পৌছি, মিলতে মিলতে সনম...”



No comments:

Post a Comment