Monday, October 29, 2018

কবিতা - রঙ্গমঞ্চ

রাজকুমার ঘোষ -

জানিনা এর শেষ কোথায় ?
অশান্ত এই মন কি যেন চায়...!
তার চাওয়া-পাওয়ার পরিধীটা,
সে অনুমান করেছে,
কিন্তু নির্ধারণ করতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে !
তবে কি এ’ ভাবেই ......

মঞ্চে তামাশা দেখাবার লোকের ভীড়
অচেনাএকজন এসে মিষ্টি সুরে বলল, ‘আমি তো আছি ?’
পরক্ষণেই,
আর একজন এসে তার হাতে অনেক কিছু দিয়ে বলল, ‘খেটে খা ...’

বড়ই বিচিত্র এই রঙ্গমঞ্চ !
জানিনা এই রঙ্গে কি হবে মোহভঙ্গ ?
নাকি সবার অলক্ষ্যে থাকা,
না জানা কোনো শুরুর সঙ্গ ... !


প্রকাশিত - মোরামের সাহিত্য পত্রিকা, ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ 

Saturday, October 13, 2018

কবিতা - মায়ের পুজো


রাজকুমার ঘোষ-

বছর ঘুরে এলো আবার
খুশির মহোৎসব
মহালয়ার মিষ্টি সুরে
আগমনির কলরব... 

পাড়ায় পাড়ায় মঞ্চ গড়ে  
মাতৃপুজোর ধুম  
প্রতিযোগিতায় টেক্কা দিতে
চলেই গেছে ঘুম ।

মা থাকেন বৃদ্ধাশ্রমে
নেইকো কোন খোঁজ...  
লোকদেখানি পুজোর মাঝে
চলছে মহাভোজ  

পুজোর এই চারদিনে  
উতলে ওঠে মন,  
পাওনা গণ্ডার আরাধনায়
মত্ত জনগণ ...!

ভক্তিভরে মাকে জানায়
শুধুই দিয়ে যাও...  
সমাজ সংসার রসাতলে
খেয়াল নেই তাও !

নগ্ন করে মাকে পেটায়,
এইতো মায়ের পূজা 
চেতনা তুমি কবে দেবে,
ওগো মা দশভূজা ... ?     

প্রকাশিত - কবিতা ক্লাব 

Sunday, October 7, 2018

কবিতা - সাথী হারা

রাজকুমার ঘোষ -

বন্ধু,
শৈশবে তোর খেলার সাথী...
খেলেছি অনেক খেলা, ঘুরেছি কত মেলা
অনেক ‘না খেলা’ জিনিসেও মন মাতাল হয়ে খেলেছি...
বড়রা দিতো বাধা, রাগও হত তাদের ওপর...
তোকে অন্ধের মত সমর্থনে তারাও অখুশী হয়েছে, তাও দেখেছি !!

কৈশোরে অনেক ‘না দেখা’ জিনিসের সাথী...
অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোকে সমর্থন করেছি...
অনেক ‘না ভাবা’র মাঝেও তোকে নিয়ে ভেবেছি...

কিন্তু আজ,
চেতনাকে জাগিয়েছি...
অস্তিত্ত্বকে খুঁজে পেয়েছি ।
ভাবলাম বয়সের ভারে তুইও নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিস...
কিন্তু, তিন ‘ম’ এর নেশায়, তুই হলি বাঁধন ছাড়া ।
বন্ধু, আমি যে হয়ে গেলাম সাথী হারা !!

Saturday, October 6, 2018

কবিতা - তুই এবং তুমি ?

রাজকুমার ঘোষ -

ভাই রে... তুই নাকি ছবি তুলিস ?
আকাশের ছবি ?
তোর ছবির নীলিমাতে অসংখ্য ছোপ ছোপ আঁকিবুকি ।
খেয়াল করিসনি বোধ হয়... !
‘না’-এ আবৃত মন দিয়ে বিরাটকে চিনবি কেমন করে ?
ভাইরে একটু মাটিতে তাকা...
দেখবি কি যেন একটা বোধ আসবে... বিবেকের বোধ !
তারপর না হয়
নীলিমায় ভেসে যাস... । 

হে বন্ধু, তুমি নাকি কবিতা লেখ ?
সত্য ও সচেতনতার কবিতা ?
ভাষার কাঠিন্য আছে, কিন্তু কি যেন আলগা লাগে ।
ওহে, সকলের সাথেই না হয় নিজের ঢাকটা পেটাও
দেখবে তার মজাই আলাদা... ।
কোথায় ছড়িয়ে পড়বে আমি থেকে আমাদের মিলিত বিজয়যাত্রা...
তখন দেখবে, তোমার আমিও উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে ।


প্রকাশিত - পদক্ষেপ পত্রিকা, আধুনিক কবিতা সংখ্যা, ২০১৫ 

Friday, October 5, 2018

মুক্ত গদ্য - চেনা জগৎ

রাজকুমার ঘোষ - 

কোন এক ধনা মাস্টারের ইচ্ছায় সেই সময় ছেলেটির বাবা দুবার ভাবেন নি যে, তার ক্লাস ফাইভে পড়া আপাত নিরীহ ছেলেটির হোস্টেলে যাওয়ার প্রয়োজন আছে কি নেই ! ধনা মাস্টার বলেছেন তাই রাজী, কারণ হোস্টেলে গিয়ে ছেলেটি ঠিকভাবে গড়ে উঠবে, একজন মানুষের মতো মানুষ তৈরী হবে । বাবা কিন্তু বুঝল না ছেলেটি তার মা’কে ছেড়ে থাকবে কি ক রে ? মা কাঁদো কাঁদো মুখে তার স্বামীর সাথে ছেলেটিকে হোস্টেলে রেখে এল । ছেলেটি প্রচন্ড কষ্ট আর হতাশা নিয়ে একটা বিরাট অচেনা অজানা পরিবেশে চলে এল, সেখানে গিয়ে দেখল ওরই মতো আরো অনেক ছেলে আছে, আর আছে হিটলার রুপী ধনা মাস্টার, যার মধ্যে ছেলেটি তার স্বপ্নের দৈত্য-দানবদের ছায়া দেখতে পেতো । ছেলেটি বুঝে উঠতে পারে না সে কি করবে ?... তার চেনা জগৎ যে, তার মা… যাকে ছাড়া সে একটু ও ভাবতে পারে না । হোস্টেলের বদ্ধ জীবনে প্রথম দিন কেটে গেল… দেখতে দেখতে আরো এক মাস কেটে গেল । তখন মোবাইল দুরের কথা মা এর সাথে কথা বলার জন্য টেলিফোনও ছিল না । কিছু পোস্ট কার্ড এর ওপর ভরসা করে থাকতে হতো ।
সুখ তো নেই, খুব দুঃখের সাথে এক মাস কেটে যাওয়ার পর কোন একটা দিন ছেলেটি পুকুর পাড়ে আনমনা হয়ে বসে তার একমাত্র চেনা জগৎ, মা’এর কথা ভাবছে, দূরের মেন রোডে দেখল খুবই চেনা হাঁটার ছন্দে দু’জন আসছে । বুঝতে তার আর বাকি রইল না, সে তখনই পুকুর পাড় থেকে উঠে সরু রাস্তা ধরে এক দৌড়ে মেন রাস্তায় পৌছে গেল তার কাঙ্খিত চেনা জগৎ-এর কাছে । পৌছে গিয়ে সে তার মায়ের বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল, আর হাউ হাউ করে কেঁদে উঠল ।
এই ঘটনার ২০ বৎসর কেটে গেছে… আজ সেই ছেলেটি বহু ঘাত-প্রতিঘাতে বেড়ে ওঠা একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক । আজ মাতৃদিবসে সেই ছেলেটি ঐ ঘটনার কথা ভাবছে আর আজকেও সে হাউ হাউ করে কাঁদছে । কেন জানি না, কিন্তু সে কেঁদে যাচ্ছে, এই ছোট লেখাটা লিখতে লিখতে সে কেঁদেই যাচ্ছে । সে তার মা’কে কারণে অকারণে কত কিছু না বলেছে, মা তার কথায় খুব কেঁদেছে হয়তো । কিন্তু মা রাগ করেনি একটুও । হাসি মুখে সব কিছু ভুলে গিয়েছে । সেই ছেলেটি প্রতিদিন কাজ সেরে রাত করে বাড়ি আসে, কিন্তু খাবারের থালা নিয়ে আগলে বসে থাকে তার সেই ছোট বেলাকার একমাত্র চেনা জগৎ, তার মা । সেই ছেলেটি তার মাকে এখনও সেই চেনা জগৎই মনে করে । তার মাকে কখনই অচেনা জগৎ-এর সাথে মিলিয়ে ফেলে না । তার মাকে সে এখনও কাছ ছাড়া করতে চায় না ।
একটা ছোট লেখার মাধ্যমে মা-ছেলের যে অমোঘ টান, সেটা ব্যক্ত করা বেশ কষ্টকর । তবুও আজ মাতৃদিবসে আমার লেখার তরফ থেকে এটা একটা ছোট নিবেদন । আমার আজকের এই লেখাটা মান অনুসারে কত ভালো হলো বা কতটা লিখলে আরো ভালো হতে পারতো বা কতটা খারাপ হলো, সে ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই । প্রচন্ড জ্বর নিয়ে আজ এই লেখাটা লিখেছি । আজ মাতৃদিবসের দিন পাঠক বন্ধুদের ভালোবাসায় আমার এই প্রচেষ্টা । শেষে প্রত্যেককে বিশেষ করে মা’দেরকে জানাই শুভ মাতৃদিবস । আপনারা সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন আর সন্তানদের আগলে রাখুন । 

প্রকাশিত - রামধনু সাহিত্য পত্রিকা, বাঁকুড়া, ২য় বর্ষ, ২য় সংখ্যা, ২০১৩ 

Wednesday, October 3, 2018

কবিতা - মাগো, তুমিই...


রাজকুমার ঘোষ -

সূর্যের প্রথম কিরণ পেয়েছি তোমার জন্য
মমতার বাঁধনেতে বাকি মায়াই নগণ্য ।
এ ভূবণের শক্ত মঞ্চে কত জটিল তত্ত্ব
তোমার স্নেহে খুঁজে নিচ্ছি সকল কঠিন সত্য ।
বারংবার সম্মুখে আসে অজানা কত বিপদ
তোমার হাত মাথায় রেখে থাকবোই নিরাপদ ।
বাধা বিপত্তি সরিয়ে সফল জীবন-ধারণ
মাগো, কষ্ট সহে তুমিই দাও শান্তির বাতাবরণ ।
প্রকাশিত - 'অনন্যা' পত্রিকা, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, জুলাই ২০১৬