Thursday, May 28, 2020

ছড়া - লকডাউনে নেপোদাদু

রাজকুমার ঘোষ # ২২.০৫.২০২০ 

নেপোদাদুর নাভিশ্বাস 
লকডাউনের মাঝে 
ঘরেতে আজ বন্দী সে যে 
নেইকো কোনো কাজে

নেপোঠাম্মার মুখঝামটা
প্রতিদিনের রুটিন 
হয়না সাধের দারু-আড্ডা 
ঘোরতর দুর্দিন 

প্রাণের বন্ধু পানুখুড়ো 
বিজনেস ট্যুর  শেষে 
লকডাউনের ফস্কাগেরোয় 
পুরি’তে গেছে ফেঁসে  

করোনা ভয়ে ধুঁকছে দেশ 
নেপোদাদু অসহায় 
জোশ হারিয়ে ঘরের মধ্যে 
কে হবে তার সহায়?

Monday, May 25, 2020

ছোট গল্পঃ নিয়তি



রাজকুমার ঘোষ # ২৬.০৫.২০২০ 

করোনা প্রভাবে মানুষ লকডাউনে ঘরেই বন্দী। রাজও ঘরে বন্দী গত দুই মাস। না আছে কাজ, শুধু খাও, আর ঘুমাও আর মাঝে মাঝে সোশ্যাল সাইটে গান গেয়ে, কবিতা লিখে পোস্টানো… এই ভাবে কেটে যায় দিন-রাত। খবরের কাগজ, নেট থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে পূর্বাভাস ছিলোই আমফাণ আসছেই। লোকমুখে তো প্রবল ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। যেমন এর আগেও কত আয়লা এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় তার প্রভাব রেখে গেছে। আসুক তবে, দেখা যাবে… বিকেল থেকে আকাশ ঘন কালো। সবাই বলছে আমফাণ আসছে প্রবল ফণা তুলে। আস্তে আস্তে ঝড়ের একটা প্রভাব লক্ষ্য করার মতো। ছাদে গিয়ে সে দেখলো, আকাশ কালো রঙে ছেয়ে গেছে। গাছগুলো নাচের একটা ছন্দ পেয়ে গেছে। প্রবল ভাবে দুলতে লাগলো। তাদের ঝড়া পাতা আর ডাল গুলো উড়ে আসতে লাগলো। আশে পাশে বাড়ির টিনের ছাউনিগুলো লাফাতে লাগলো। শুরু হলো প্রবল বৃষ্টি। ঝোড়ো হাওয়ার সাথে বাড়ির জানলাগুলোর কিছু কাঁচ ঝনঝনিয়ে উঠলো। সবল ঝাপটায় বৃষ্টির জল ঢুকে পড়লো জানলা দিয়ে, দরজার তলার নিচের ফাঁক দিয়ে। ভিজিয়ে দিলো মেঝে। রান্না ঘরের জানলার কাঁচ ভেঙে জল ঢুকতে লাগলো। থালা-বাসন গুলো ঝনঝন করে আওয়াজ সহকারে পড়তে লাগলো। বাড়ির মেয়েরা সেই বাসনগুলো তুলে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো। এদিকে দরজা বা জানলা দিয়ে জল ক্রমাগত ঢুকতেই থাকে। বেশ কিছু কাপড় বা প্লাস্টিকের চট দিয়ে সেই জল আটকানোর এক অসম প্রচেষ্টা। কিছু সফল বলা যেতে পারে। বাড়িতে বিদ্যুৎ কখনই চলে গেছে। সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাতের কালো নিকষ অন্ধকারে অনেকদিন পর আবর্জনায় পড়ে থাকা একটা মাত্র হারিকেন জ্বালানো হলো। কিছু মোমবাতি ছিল তাও জ্বালানো হলো। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গভীর রাতে চলে এলো, কিন্তু ঝড়ের রেশ কমেনি। প্রবল হাওয়ার বিভৎস আওয়াজে এক বর্ণও চোখের পাতা দুটো এক করতে পারেনি রাজ। ঘুম তো আসেইনি। সকালের দিকে একটু ঘুম এসেছিলো। উঠতে প্রায় ৮টা হলো তার। ঘুম থেকে উঠেই ছেলে বললো, 

- বাবা, বেশ কয়েকটা গাছ, ইলেকট্রিক পোল ভেঙেছে। এছাড়াও কিছুটা দূরে একটা বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়েছে। 

- বলিস কিরে… চল দেখি একবার বাইরে গিয়ে। 
- আরে ঐ বাড়িটার ছাদে দেখো বাবা, কোনো বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে এসে পড়েছে। 

খবর পেলো, আশে পাশের বাড়িতে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ইলেকট্রিকের তার খুলে পড়েছে। সারাটা দিন, বিদ্যুৎ নেই, জলের সরবরাহ নেই। কি ভাগ্যিস রাজদের পাতকুয়া ছিলো। সেখান থেকেই জল সংগ্রহ করে নেওয়া হলো। খাবার জল আগে থেকেই সংগ্রহ করা ছিলো। 
সারাটা দিন কিভাবে যে কেটে গেলো, সন্ধ্যে গড়ালো। বাড়ির মধ্যে অন্ধকার ঘনিয়ে এলো। মোমবাতি আর নেই। একমাত্র হারিকেনই সম্বল। সেটাই ব্যবহার করা হলো। একটা জায়গায় সে জ্বলে আছে আর সকলের দশা দেখে মিটমিট করে হাসছে। রাজ তার অভ্যাস মতো মা’র তৈরী করা চা পান করতে বাড়ির নিচের ঘরে চলে এলো। অন্ধকারে ফ্লাক্সে রাখা চা ছোট একটা গ্লাসে কোনোরকমে নিলো। একটা বিস্কুটও খুঁজে নিলো। বিস্কুট সহযোগে চা দু’-তিন চুমুক দেওয়ার পর সে তার মা’এর খোঁজ নিলো, 

- মা, কোথায় তুমি? অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছি না কেন? 
রাজের বাবা বারান্দায় ছিলো, তিনি এলেন লাইটার জ্বেলে। বললেন, 
- ঘরে গরম তো? দেখ তোর কম্পিউটার রুমের ঘরের মেঝেতে ঘুমোচ্ছে। 
- বলো কি? মেঝের মধ্যে ধুলো আছে। পিঁপড়ে, টিকটিকি কত কি ঘুরতে পারে। এইভাবে ঘুমোয় কখনো! 

সে অন্ধকারে হাতরে হাতরে হাতে চা’র এর গ্লাসটা নিয়ে ঘরের দরজার কাছে এসে খুলতে গেলো দরজা। চা’র গ্লাসে একটা চুমুক দিতে গেলো। হঠাৎ অনুভব করলো, গ্লাসের সাথে লেগে থাকা কড়ে আঙুলে কি একটা হালকা স্পর্শ। মনে মনে সে বললো, 
- কেমন একটা মনে হচ্ছে আমার? 
রাজ বাবাকে বললো, বাবা গ্লাসের মধ্যে কি একটা পড়লো? কেমন একটা মনে হচ্ছে আমার। 
- কি পড়বে? 
- না গো, আমি চুমুক দিতে যাচ্ছি, কিন্তু আঙুলে একটা স্পর্শ পেলাম। 
- দাঁড়া, লাইটারটা জ্বালি 
লাইটার টা জ্বালানো হলো, টিম টিম করতে থাকা লাইটারে জ্বলতে থাকা আগুনে কিছুই বোঝা গেলো না। মোবাইলের সুইচ অফ, কাজেই অগত্যা গ্লাসটা নিয়ে রাজ ছুটে গেলো হারিকেনের কাছে। হারিকেন উঁচু করে ধরতেই রাজের চক্ষু চড়কগাছ। গ্লাসের মধ্যে থাকা চা’র মধ্যে পড়ে আছে একটা ছোট্ট টিকটিকি। গরম চা’র মধ্যে টিকটিকি পড়েই সেদ্ধ হয়ে ভাসছে। রীতিমত ও বিষ্ময়ে হতবাক। 
রাজ চুপ করে সিঁড়ির একটা ধাপে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর নিজের অবস্থায় ফিরে ও ব্যাপারটা অনুধাবণ করলো। ওর মাকে যখন ডাকতে গেলো দরজা খুলে, তখনই ও চুমুক দিতে যাচ্ছিলো চা’র গ্লাসে। দরজার ওপরে থাকা ঝোলানো একটা ব্যাগের গায়ে আটকে ছিলো টিকটিকিটা, সেই মুহূর্তেই চা’র গ্লাসে পড়ে। 
রাজ আর ভাবতে পারে না, সে সেই গ্লাসে থাকা চা সমেত মরা টিকটিকিটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। তারপর ছুটে গেলো সে তার আরাধ্য কুল দেবতার কাছে… 
- জীবনে মরণতো এইভাবেই হতে পারতো। তুমি তা চাওনি। যতই করোনা আর আমফাণ আসুক… আমি আছি এখনো, কিছু বাকি কাজ আছে করার জন্য, আমার ছেলে, স্ত্রী এবং আমার পরিবারের পাশে থাকার জন্য। 
রাজের স্ত্রী ছিলো সেখানে, সে সমস্ত ঘটনার সাক্ষী। সে বললো – 
- আমরা ক্ষতি করিনি কারোর। আমাদের নিয়তি এইভাবে হতে পারে না। একদিন ঠিক সূর্যের আলোয় সব কিছু ফিরে আসবে। এই অন্ধকার সাময়িক।

Sunday, May 24, 2020

কবিতা - ভাষার লড়াই

রাজকুমার ঘোষ -

অস্তিত্বের সংকট; চলেছে লড়াই 
মৃত্যু বরণ করেছে কত তাজা প্রাণ 
মা'র কোল খালি করে শহীদ সন্তান 
সংগ্রামী সে লড়াই ইতিহাসে ঠাঁই। 

বাংলার পাশে ছিলো অসমিয়া ভাই 
বিভেদের জাঁতাকলে ভাষার সম্মান 
বিদ্রোহের আগুনে যা ছোঁড়ে মৃত্যুবাণ
বাংলা ভাষার তরে করি যে বড়াই। 

প্রাণ দিয়ে মান রাখে বাংলার মুখ 
হৃদয়ের মাঝে থাকে বাংলার ভাষা 
সৃষ্টির আনন্দে বাঁচে সকলের আশা। 
 
ভাষার ঐতিহ্য রক্ষা যেন সর্বসুখ
আগামীর প্রতিশ্রুতি মনে বাঁধে বাসা 
বিবাদের শেষ হোক; ভাষার সম্মুখ।

প্রকাশিতঃঃ- পদক্ষেপ পত্রিকা ( চুঁচুড়া)'২০১৯ এর এই সংখ্যার বিষয়ভাবনা ছিল— অমর ১৯। 

Tuesday, May 19, 2020

কবিতা - পূর্ণ জননী


রাজকুমার_ঘোষ -

সাধনাই তো বটে...
কত গঞ্জনার পর
কোল আলো করে তুই এসেছিলিস...
বুক ভরা মমতায় নিজেকে সঁপে দিয়েছি,
লালনে পালনে, লাগামছাড়া স্নেহতে তোকে ভাসিয়েছি...
মেপে দেখিনি গভীরতা ।
শাসনের ঘেরাটোপে তোকে বন্দি করেও রাখিনি,
দলছুট হয়ে তুইও এগিয়ে গেছিস বাঁধনছাড়া উল্লাস নিয়ে...
মেতেছিস নানা অবক্ষয়ের খেলাতে...

স্নেহে অন্ধ হয়ে আমিও
তোর আগুনে খেলার মত্ততা নিয়ে কখনো ভাবিনি...
তোর বাবার চোখ রাঁঙানিকেও বারে বারে উপেক্ষা করে গেছি...
সামাজিক দায়বদ্ধতায় একরাশ হতাশা নিয়ে
তোর বাবাও অকালে চলে গেলো...
আমিও বুঝতে পারলাম
কিন্তু কফিনের শেষ পেরেক লাগানো তো প্রায় শেষ...
চোখের সামনে চিতায় তোকে জ্বলতেও দেখলাম...
কাঁদলাম...... খুব কাঁদলাম...
কিন্তু এ কান্না মমতার নয়, তোকে হারাবারও নয়...
শুধুই হতাশা,
যে হতাশা আমার লজ্জার, আমার মাতৃত্বের অপূর্ণতার...
সঠিক জননী না হতে পারার হতাশা ।
এ জন্মে যা আমাকে গ্রাস করে যাবে...
“হে ভগবান...পরজন্ম দাও,
খোকার পূর্ণ জননী হওয়ার একবার সুযোগ করে দাও...”

----------------------
ভাই শ্রীকৃষ্ণ দে সম্পাদিত প্রভাতী পত্রিকা ব্লগে বিকেলের পাতায় আজ প্রকাশিত 

Saturday, May 16, 2020

কবিতা - মুক্ত ভুবনের আহ্বান

রাজকুমার ঘোষ   # ১৫.০৫.২০২০

সব কিছু আজ থমকে গেছে,
জীবনটা গতিহীন
অচেনা অদেখা শত্রুর কাছে
আমরা পরাধীন।
বসে থেকে ছাদে, উদাস মনে
তাকাই আসমানে
ছুটে চলে চাই, তখনই ভাবি,
যাই বা কোনখানে?
ঠাকুর, আল্লা, গড যে আজ
সকলেই অসহায়
ঘরের মধ্যে বন্দী সবাই
প্রাণ রাখাটাই দায়৷
প্রাণঘাতী এক মারণ রোগের
জন্ম দিয়েছে চিন
তারই জেরে কাঁপছে বিশ্ব
কাটাচ্ছে দুর্দিন।
মৃত্যু ভয় দানা বেঁধেছে
সারা বিশ্বের মাঝে
সর্দি-জ্বর, কাশির ওষুধ
লাগে না কোনো কাজে
এমন ব্যাধিতে ধুঁকছে মানুষ
খুঁজছে প্রতিষেধক
সবার কাছে ভগবান তাই
নার্স ও চিকিৎসক
বুদ্ধিজীবী, নেতা-মন্ত্রীও
হয়ে গেছে দুর্বল
এইতো সময় পাশে থেকে
বাড়াবে মনোবল
জনগণ আজ সহায়হীন
অজানা আতঙ্কে গ্রাস
অপেক্ষা শুধু সেই দিনটার
রইবেনা করোনা ত্রাস
কবেই বা আসবে সেই দিন,
মুক্ত এ ভুবনে ফিরে
মৃত্যুভয় আর বন্দীজীবন
থাকবে না আর ঘিরে।

কবিতা - ফেসবুকে হট্টগোল



ফেসবুকের ওয়ালে দিচ্ছো কতই পোস্ট
আশা করছো অনেক হবে লাইক-কমেন্ট-শেয়ার
অন্য কারোর পোস্ট এড়িয়ে যাচ্ছ দোস্ত,
নিজের ঢাক নিজেই পিটে হয়না কোনো পেয়ার।
গ্রুপ-পেজের আমন্ত্রণে হচ্ছো বড়ই বিরক্ত
ফেসবুকেতে আছো যখন মানতে হবে প্রোটোকল
উপায় আছে বলি তবে, মনটা করো শক্ত
ফ্রেন্ডলিস্ট ফাঁকা করলেই, হবেনা আর হট্টগোল!


@রাজকুমার ঘোষ
#১৫.০৫.২০২০

Thursday, May 14, 2020

ছোটদের গল্প - বিট্টুর কেরামতি



রাজকুমার ঘোষ  # 14.05.2020

-কিরে  ঘুমিয়ে পড়, এখনো ঘুমোসনি? কি জ্বালায় ছেলেটাসকালে উঠে স্কুলে যেতে হবে তো নাকি উঠতে না পারলে মার খাবি
মাএর বকুনি খেয়ে বিট্টু পাশ ঘুরিয়ে চোখ বুজে ঘুমোবার চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুম আসছে না ওর পেট যে গুড় গুড় করছে ভীষণ পেট ব্যাথা করছে পটি যাবার কথা ভাবছে কিন্তু ওর মা যে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে মাকে ডাকলেই জোর বকুনি দেবে
আসলে হয়েছে কি, চারদিন আগে বিট্টু পেটের ব্যাথায় কাবু ছিলো উলটো পালটা খেয়ে যা হয় আর কি আমাশা হয়ে গিয়েছিলো ডাক্তার দেখিয়েছিল স্কুলেও যায়নি সে একটু ভালোও হয়েছিল কিন্তু আজ ওর বাড়িতে মামা-মামি এসেছিল সাথে ওর দুটো মামাতো ভাইও এসছিল রোববারের দিন বেশ জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হয়েছে ওর প্রিয় জিনিস ফিস কাটলেট আনা হয়েছিল ওর মা ওকে বার বার বারণ করেছিল,
-        বাবু, বেশি খাসনি ফিস কাটলেট তোর শরীর ভালো না এরপর যদি পেটের ব্যাথা হয়, দেখিস কি করি আমি  
কিন্তু তারপরেও বিট্টু লোভ সামলাতে পারেনি প্রায় চারটে ফিস কাটলেট সাঁটিয়েছে সাথে অন্যান্য খাবারও যেমন চিকেন তন্দুরি, মোগলাই একটু একটু করে খেয়েছে ব্যস সহ্য হয়নি ওসব খেয়ে ঘুমোনোর সময় যত পেট ব্যাথা ওর মাও জানেনা এখন যদি মাকে ডেকে বলে ওর এই অবস্থা, কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে ও ভয়ে চুপচাপ থাকে কিন্তু পেটের ব্যাথা যে বাড়তে থাকে এবং পটি পায় শেষমেশ ও সিদ্ধান্ত নিলো, যে ও একাই টয়লেটে যাবে আর চেপে রাখা যাবে না এইমুহূর্তে ওর মনে হচ্ছে টয়লেটটা বহুদূর পৌঁছতে পারবে তো? দুঃখে কাতর হয়ে বিট্টু পেটে হাত বোলাতে বোলাতে খাট থেকে নামতে গিয়ে মেঝেতে পড়ে গিয়ে কুপোকাত। শব্দ হলেও বিট্টু দেখলো ওর মা তখনো নাক ডাকছে। খানিকটা আস্বস্ত হয়ে পা টিপে টিপে পড়িমড়ি হয়ে টয়লেটের দিকে ছুটে গেলো। রান্নাঘরের পাশেই ছিলো টয়লেট। এই রান্নাঘরের মুখের দেওয়ালে ছিলো বড় একটা ঘড়ি। বিট্টুর  চোখ পড়ে বড় ঘড়ির তলায় দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট ছায়া মূর্তির দিকে। তা দেখে বিট্টু পটির কথা ভুলে গেলো, টিভিতে দেখা বিরাট দৈত্যের কথা মনে পড়লো। বেশ ভয় পেয়ে কাতর হয়ে আর সহ্য করতে পারলো না বিট্টু। পটি পা বেয়ে গড়াতে লাগলো আর ঘামে তার পৈতে ভিজে গেলো। সেই বিচ্ছিরি অবস্থায় বিট্টু সোজা চলে গেলো ঘরে থাকা সোফার তলায় লুকোতে এবং দৈত্যকে লক্ষ্য করতে লাগলো এবং ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। তারপরেই একটা বিকট চিৎকার, ‘বাঁচাও গো কেউ আমায়, বাঁচাও... এ বাবা! কি সব লেপ্টে গেলো আমার লুঙ্গি আর জামায়, আর কি বিচ্ছিরি গন্ধরে বাবা”। এরপরেই ঝনঝনিয়ে পড়লো অনেকগুলো বাসন।
বিট্টূ ভয়ে সোফার ওপরে বসে পড়লো। আর বিকট শব্দতে বিট্টুর বাবা-মা’র ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ছুটে চলে এলো এই ঘরে, লাইট জ্বালতেই দেখে ঘরে ভয়াবহ অবস্থা। তাদের চোখ পড়লো প্রথমে বিট্টুর দিকে, বিট্টু বলে ওর মাকে,
-  মা আমায় তুমি ধরো। 
- ইস! একি করেছিস শয়তান ছেলে... আমাকে জ্বালিয়ে খেয়ে নিলো। দাঁড়া, বেয়াদপ তোকে দেখাচ্ছি  মজা।
- মা, দেখো ওদিকে দৈত্য!
বিট্টুকে মারতে যাবে কি! সোফাও পটিতে যাতা অবস্থাগন্ধতে টেকা দায়। বিট্টুর কথায় এরপর দু’জনেরই চোখ পড়ে একটু দূরে থাকা একটা ষণ্ডামার্কা লোকের দিকে। তারা দেখে লোকটা পুরো পটির সাথে লেপ্টে গেছে এবং স্লিপ খেয়ে হড়কে গেছে রান্নাঘরে থাকা থালা বাসনের দিকে আর তার ঠেলায় থালা বাসন গুলো সব পড়ে গেছে। লোকটা ভেউ ভেউ করে কাঁদছে আর বলছে –
-        আমাকে বাঁচাও, কি সব লেপ্টে আছে আমার সাথে। পুরো হড়কে গেছি। আর উঠতে পাচ্ছি না। কোমড়ে প্রচন্ড লেগেছে।
-        তুমি কে? এতো রাতে কি করতে এসেছো  এখানে? দাঁড়াও পুলিশকে ফোন করছি।  - বিট্টুর বাবা বললো।
(২)
আসলে হয়েছিল কি? একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক –
বিশে নামে এক চোর, সব কিছু খেয়াল রেখেছে আজ সকাল থেকে। বিট্টুদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এসেছে, তাই সকাল থেকে ওদের ব্যস্ততা থাকবে। সবাই ক্লান্ত হয়ে রাতে নিশ্চিন্তে গভীর ঘুমে থাকবে। সুযোগ আজই, ওদের বাড়িতে ঢুকে সব কিছু সাবাড় করারযথারীতি প্রস্তুতি নিয়ে বিশে হানা দেয় বিট্টুদের বাড়ি। প্রথমে পাঁচিল টপকায়। তারপর ওদের বারান্দায় প্রবেশ করে। তারপর সদর দরজার প্রায় পাশেই জানলার ঝড়ঝড়ে রডগুলো কাটে করাত দিয়ে এবং সন্তর্পনে প্রবেশ করে কমন ঘরে এবং পাশেই রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রান্নাঘরের সামনে একটা বড় দেওয়াল ঘড়ি আছে তার নিচে এসে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক সেই সময়েই বিট্টু রান্নাঘরের পাশে টয়লেটের দিকে ছুটে যায়। আর বিট্টুর চোখে দৈত্যর ছায়ামূর্তি হিসাবে নজরে পড়ে যায়। 

 (৩) 
বিট্টুর বাবা পুলিশকে কল করতেই থানার ওসি সদলবলে এসে গেলো। তারপর ষণ্ডামার্কা মূর্তিমানকে দেখেই ওসি বলে উঠলেন,
-        এযে বিশে চোর!
তারপরই ছড়ার স্টাইলে ওসি বললেন,
“বারেবারে পুলিশকে তুই  দিতিস চোখে ধুলো
পটিতে আজ লেপ্টে গেছিস ওরে ব্যাটা হুলো”
অট্টহাস্যে ওসি এবার বাকি সহকর্মীদের আদেশ করলেন,
“বিশে’কে চেপে ধরে পড়াও হাতকড়ি
ব্যাটা এবার চালান হবে। বলো, বলহরি”  
তারপর আনন্দে আহ্লাদ হয়ে বিট্টুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ভয় কেন বিট্টুবাবু ধরো আমার হাত
তুমি হলে আসলি হিরো, করলে তুমি মাত।“
পুলিশেরা ঐ অবস্থায় বিশেকে পাঁচাকোলা করে সেখান থেকে নিয়ে চলে গেলো। ওসি এবার বিট্টুর বাবা-মা কে বললেন,
-        বিট্টু কে একদম বকবেন না, ও যে আজ কি কেরামতি করেছে আপনাদের কোনো ধারণাই নেই। এই বিশে’কে কেউ ধরতে পারছে না । অনেকগুলো চুরির  কেস ওর নামে আছে। প্রায় তিন চারটে থানার পুলিশ ওকে খুঁজছে। আপনারা ওকে পরিস্কার করিয়ে দিন। আর ওকে বকবেন না
অগত্যা বিট্টুর মা ওসির কথা শুনলেন। ওসি চলে গেলেনতারপর বিট্টুকে পরিস্কার করিয়ে দিলেন। কিছু না হলেও বিট্টুর বাবা-মা বিট্টুর অজান্তেই এই কেরামতি মেনে নিলেন। তা নাহলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যেতো সেটা ওনারা বুঝেছেন।

সমাপ্ত    

Monday, April 6, 2020

ছোটগল্প- নিজেকে খুঁজে পাওয়া



জীবনের খেলায়
*নিজেকে খুঁজে পাওয়া*
রাজকুমার ঘোষ
আরোগ্য নিকেতন নার্সিং হোমের গেটের সামনের রাস্তায় গত কদিন ধরে কৌতুহলী জনতার ভীড়ে নাজেহাল অবস্থা। অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস। লোকাল এম.এল.এ'র মা কদিন ধরেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা কষছিল। এম.এল.এ তথা পাড়ার সবার দাদা পতা ওরফে প্রতাপ ধারা নার্সিং হোমের ম্যানেজমেন্টকে শাসিয়ে ছিল - আমার মাকে বাঁচাতে না পারলে গোটা নার্সিং হোমকে উড়িয়ে দেবো৷ শালা কাউকে ছাড়বো না।
তার এই শাসানিতে সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ডাক্তার সুবর্ণ ঘোষালের কৃতিত্বে মৃতপ্রায় পতার মা ফিরে পায় জীবন। ডাক্তারের অসাধ্য সাধন ৷ পতা আপ্লুত। কাঁদতে কাঁদতে ডাক্তারের পা ধরে বলেছিল
- ভগবানকে আজ দর্শন করলাম৷ ডাক্তার আপনি না থাকলে মাকে ফেরাতেই পারতাম না। আজ থেকে এই পতা আপনার গোলাম। যখন যেমন প্রয়োজন পড়বে এই পতাকে স্মরণ করবেন, এই পতা তার সাথীদের নিয়ে আপনার দরবারে হাজির হয়ে যাবে।
এদিকে ডাক্তার সুবর্ণ ঘোষালের জয়জয়কার। মিডিয়া থেকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে তার এই অসাধ্য সাধন ছড়িয়ে পড়েছে। অপারেশন সফল ভাবে হওয়ার পর মিডিয়ার ভীড় নার্সিং হোম চত্বরে হয়েছিল, মিডিয়ার লোক একটি বারের জন্য ডাক্তারের সাথে কথা বলতে চায়। ডাক্তার মিডিয়ার কাছে এসে জানায়
- আজ থাক, আমি ভীষণ ক্লান্ত। আপনারা এক কাজ করুন, দুদিন বাদে পুজো শুরু। ষষ্ঠীর দিন সকালে আমাদের বাড়ি চলে আসুন। সেদিনই আমি কথা বলবো।
ষষ্ঠীর দিন সকাল, ডাক্তার সুবর্ণ ঘোষালের বাড়ি। বাড়ির সামনে বিশাল পুজোর চাতাল। সেখানে পুজোর আয়োজনে অনেকেই ব্যস্ত। হয়তো খানিক বাদে ঠাকুর চলে আসবে। মিডিয়ার লোক আস্তে আস্তে আসতে শুরু করেছে। তারা আজ ডাক্তার সুবর্ণ ঘোষের সাক্ষাৎকার নিতে চায়।
যথা সময়েই ডাক্তার প্রেসের লোকের সামনে চলে এলো। একজন সাংবাদিক ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলে, আপনি তো যুব সম্প্রদায়ের কাছে একজন আইকন। এম.এল.এ প্রতাপ ধারার মা যিনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন, তাকে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে দুর্দান্ত কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
- আমি আমার কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করেছি। একজন রোগীকে সুস্থ করার দায়িত্ব সকল ডাক্তারের কর্তব্য। হ্যাঁ রোগির অবস্থা ভীষন জটিল ছিল। সেখান থেকে ওনাকে আমি সুস্থ করেছি। একটা কথা বলি, আমাকে কৃতিত্ব না দিয়ে বরং পতাকে দিন। ওই ওর মাকে ফিরিয়ে এনেছে।
উপস্থিত সকল মিডিয়ার লোক ডাক্তারের এই কথা শুনে অবাক হয়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওখানকার পরিবেশ নিস্তন্ধ। তাদের মধ্যেই একজন বলে উঠলো, ঠিক বুঝলাম না।
- পতা হলো ওর মায়ের আদর্শ সন্তান। গত এক সপ্তাহ ধরে সে সন্তান তার সমস্ত কাজ কর্ম ভুলে তার মায়ের সুস্থতার জন্য নার্সিং হোমের ভিজিটিং রুমে দিনরাত এক করে দিয়েছে। তার মা সুস্থ না হয়ে পারে না। হ্যাঁ আমি ঠিকই বলছি। ওর মায়ের প্রতি ব্যকুলতা আমাকে আরও জেদি করে তুলেছিল, যে করেই হোক আমি ওর মাকে সুস্থ করে তুলবো।
একজন সাংবাদিক বলে,- এতো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার, যে এক মা এর প্রতি তার সন্তানের ব্যকুলতা থাকবে।
- না, পতার মত কারোর নেই। এমন কি আমারও নেই। আপনাদের কথা অনুযায়ী আমি একজন সমাজের জনপ্রিয় ডাক্তার। সমাজের গণমান্য প্রতিনিধি। আমি কি করেছি আমার বিধবা মার জন্য। এই দেখুন আজ পুজোর ষষ্ঠীর দিন। বাড়িতে ঠাকুর আসছে। সবাই ব্যস্ত। আমার স্ত্রী নতুন শাড়ীতে সজ্জিত সাথে তার মাকেও নতুন শাড়ীতে সাজিয়ে রেখেছে। কেন আমার মাকে সাজায়নি? আমার মা যে এই ঘরের এক কোণে পড়ে আছে। যে তার সন্তানের কামনায় সারা দিন রাত ভেবে থাকে। আমিই বা কিরকম সন্তান। যাকে একটুও সময় দিতে পারি না। প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে যাই, ফিরি রাতে। আমার মায়ের দিকে ঘুরেও তাকাইনা। সে কি খেলো? সে কি পড়লো? তার শরীর কেমন আছে? শুধুই ব্যস্ততা আর টাকা পয়সার পেছনে ছুটে চলা। কিন্তু পতা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। ওর করুণ আর্তি আমাকে সব কিছু মনে করে দিয়েছে। জীবনের খেলায় পতা আমার মত নামমাত্র এক অখ্যাত-বিখ্যাত ডাক্তারকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে৷ ওর এই মনোভাবকে কুর্ণিশ জানাই। আমার ডাক্তার হওয়ার পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশি, তিনি হলেন আমার মা। আমার জগৎ জননী। আজ ষষ্ঠীর দিনে আমাদের বাড়িতে মা দুর্গার মূর্তি আসছে। সকলে ব্যস্ত মাটির এই মূর্তিকে স্বাগত জানাতে। অথচ ঘরের মধ্যে একজন জীবন্ত মা দূর্গা আছে তার দিকে ঘুরেও তাকাচ্ছি না। ছি ছি ধিক্কার জানাই আমাদের মত সন্তানকে। তাই আমি ঠিক করেছি আজ থেকে প্রতিটা দিন আমি আমার মায়ের সাথে একটু হলেও সময় দেব, মাএর সাথে থাকবো। এই পুজোর কদিন আমি আমার দুর্গা মার সাথে কাটাবো সারাক্ষণ।
একজন মিডিয়া সাংবাদিক তাদের শিরোনামে নতুন করে শব্দ সাজাচ্ছেন, ডাক্তারের মহানুভবতা আরও একবার সকলের সামনে ... ডাক্তার সুবর্ণ ঘোষাল সেই শব্দগুলো লক্ষ্য করেই ছুটে এলেন তার কাছে, উনি বললেন – আমি দেবো নতুন শিরোনাম... অবশেষে একজন ডাক্তার প্রকৃত মানুষ হওয়ার রাস্তা খুঁজে পেলো।
তিনি আরও বললেন, এ শুধু আমার জীবনের ক্ষেত্রে নয়, এই সমাজের সকল মানুষের কাছে বার্তা। সকল ব্যস্ত মানুষ তাদের জীবিত বয়স্ক মায়েদের জন্য যেন একটু সময় দেন। বিধবা মায়েদের শেষ আশ্রয় যেন বৃদ্ধাশ্রম না হয়।
প্রকাশিতঃ আমাদের লেখা পত্রিকা, (সবুজ পত্রিকা), ২০১৯
 

রম্যরচনা - পটলার বায়োস্কোপ


  
রাজকুমার ঘোষ  -
পটলা অজ পাড়া-গায়ের ভীষণ গরীব পরিবারের ছেলে। ধোপার কাজ করে ওদের সংসার খুব কষ্টে চলত। ওদের পরিবার তথা গোটা পাড়ার মূল উপার্জন ধোপার কাজের উপরই নির্ভর করত। চার পুরুষ ধরে ওদের পারিবারিক কাজ এখন সেভাবে আর হয়না। তারপর ওই একমাত্র ছেলে, দুই দিদির সাথে দুই বোনও আছে। সংসারের হাল ধরতে ওকে শহরে চলে আসতে হয়।   এক পরিচিতের সুপারিশে সে এক ধনিবাবুর বাড়িতে কাজের সুযোগ পায় এবং তার সাথে বাইশ বছরের পটলার প্রথম বার শহরে পা রাখা। ভালোই লাগে তার... সে বাবুর বাড়ির কিছু কাজ করে এবং বাবুর একটি রেস্টুর‌্যান্টের দেখাশোনাও করে। বিকালে কাছাকাছি একটি পার্কে যায়, অনেক কিছুই দেখে তার ভালোই লাগে। আর একটা জিনিস ওর খুবই প্রিয়...  তা হল টিভি, যেটা ওকে আরও ভালো রেখে দিয়েছে। সারাদিন টিভিতে কত যে বায়োস্কোপ হয় তার ঠিক নেই... সেই রকমই একটি বায়োস্কোপ দেখে ও ভীষন ভাবে অনুপ্রানিত হয়ে পড়ল। গল্পের নায়ক ঠিক যেন ওর মত... গ্রাম থেকে শহরে এসেছে ... হাতে একটি চ্যালা বাঁশ আর সবসময় তেল মাখিয়ে চকচক করে। আর সেই তেল মাখানো চ্যালা বাঁশটি নিয়ে নায়কের কত হম্বিতম্বি ! সুন্দরী হট নায়িকাও নায়কের প্রেমে অন্ধ, নায়ককে জড়িয়ে কত নাচ-গান, তারপর চুমা-চাটি ... পটলা নিজেকে সেই নায়কের জায়গায় রেখে দিয়েছে এবং সাধ করে একটি চ্যালা বাঁশও জোগা করে ফেলেছে, আর তাতে প্রতিদিন যত্ন করে তেলও মাখিয়ে রাখছে। বাঁশটিও আসতে আসতে পটলার তেল মাখানো যত্নে চকচকে হয়ে উঠেছে।      
একদিন পটলা তার তেল মাখানো বাঁশটি নিয়ে সেই নায়কের মত কেতা করে পার্কে ঘুরতে গেছিল। হঠাৎ সেখানে একটি হট মেয়েকে দেখে পটলা উৎফুল্ল হয়ে পড়ল। মেয়েটিকে বেশ দেখতে, তারপর একটি হাফ প্যান্ট ও পরনে একটি টাইট গেঞ্জী... ব্যাস আর দেখে কে ? ... বেশ উত্তেজিত হয়ে সে সেই বায়োস্কোপে দেখা নায়কের মত কায়দা করে মেয়েটির সামনে দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে পড়ল। মেয়েটি দারুন চমকে গেল তার পর ‘এই গাঁইয়া... চল ফোট’ বলেই ওকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। পটলাও দমবার পাত্র নয়, সেই নায়কের ভূত তার মাথায় চেপে বসে আছে... সে মেয়েটির পিছু নিল, কিন্তু কিছুক্ষণ পর আর দেখতে পেল না।  মনটা খারাপ করে এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ নজর গেল একটি ঝোপের দিকে, সেই জায়গাটি বেশ নিরালা ... আশেপাশে কেউই নেই। পটলা বেশ খুশি মনে এগিয়ে গেল সেই ঝোপের দিকে, সেখানে গিয়েতো পটলার চক্ষু চড়কগাছ। সেখানে গিয়ে আড়াল থেকে দেখে ঝোপের মধ্যে সেই মেয়েটির সাথে একটি ছেলেও আছে, মেয়েটির পরনে কিচ্ছুটি নেই, আর অদ্ভুত সব গোঙানির আওয়াজ শুনতে পেল, যা দেখে পটলার মুখে, ‘ছিঃ ছিঃ... অসভ্য...! অসভ্য...!’ । পটলা রেগে গিয়ে সেখান থেকে চলে এল এবং তার মনটাও খারাপ হয়ে গেল।  
সে নিজের বাসায় ফিরে প্রথমেই চ্যালা বাঁশটা ছুঁড়ে ফেলে দিল। রাগে ফেটে পড়ল... অবশেষে নিজের অবস্থার কথা ভেবে শান্তও হল। এদের সাথে পাল্লা দেওয়া পটলার কম্ম নয়। যাই হোক সে আবার বাঁশটিকে তুলে নিয়ে পরম যত্নে আরো তেল দিয়ে সেবা করতে লাগল আর বাবুর বাড়ি ও রেস্টুর‌্যান্টে মন দিয়ে কাজ করতে থাকল, কিন্তু টিভি দেখা প্রত্যেকদিন তার চাইইই। 
তিনমাস পর, একদিন পটলা তার বাবুর রেস্টুর‌্যান্টে মন দিয়ে কাজ করছিল। সেদিন প্রচুর ঝড়জল হচ্ছিল। রেস্টুর‌্যান্টে কেউই আসেনি সেভাবে, সে একাই ছিল ... সেই ফাঁকে সে রাতের খাবার তৈরির ব্যবস্থা করছিল... আর বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছিল। রেস্টুর‌্যান্টের বাইরে একটি মেয়ে এসে দাঁড়াল। বৃষ্টিতে পুরো ভিজে গেছে, একটু মাথা বাঁচাবার জন্য সে রেস্টুর‌্যান্টের ভেতরে ঢুকে পড়ল। মেয়েটির পরনে ছিল সাদা রঙের শাড়ি ... বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে মেয়েটির শাড়িটি শরীরের সাথে লেপ্টে গেছে। পটলা মেয়েটির শরীরটিকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে... কিন্তু মুখের দিকে চোখ যেতেই সে চিনতে পেরেছে মেয়েটিকে, এই মেয়েটি হল সেই ঝোপের মধ্যে গোঙানী... ‘থাক থাক থাক’ এই বলে পটলা নিজেকে স্থির করল। সে আর তাকালো না, নিজের কাজ করতে লাগল। হঠাৎ পটলা দেখল মেয়েটি ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরেছে তারপর ওকে ‘আমাকে প্লীজ বাঁচান’ বলে হাতটাকে চেপে ধরেছে। পটলা মেয়েটিকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, ‘তোমার মত অসভ্য মেয়েকে বাঁচাতে আমার বয়েই গেছে, যাও এখান থেকে’ এটা বলার পর মুখ তুলে তাকালো এবং বুঝতে পারল যে জনা তিনটে ছোকরা মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যেতে এসেছে। তাতেও পটলা বিচলিত না হয়ে মেয়েটিকে বলল, ‘আরে যাও ওদের সাথে, তোমার তো ওদেরই পছন্দ’ ...  কিন্তু কোথা থেকে একটা হাত পটলার চোয়ালে বেমক্কা পড়তেই পটলা ছিটকে গেল এবং তার সাথে তিনজন মিলে অনেক জানোয়ারের নাম দিয়ে, বোকা-পাগলা আরও কত কি শব্দ দিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে লাগল, সেসবের মধ্যে ওর বাবা-মাকেও কোথা থেকে টেনে আনল। ব্যাস পটলার মাথা ঘুরে গেল, তারপর সে কোথা থেকে সেই তেল মাখানো বাঁশের চ্যালাটা নিয়ে তিন ছোকড়াকে রামধোলাই দিল। আর নিজেও ধোপার কাজ করেছিল, সেই জামা কাপড় কাচার মতই তিনজনকে ধরে এমন ঠ্যাঙালো, ওরা সেখান থেকে পালাল। এদিকে মেয়েটি এবার ওকে আরো জড়িয়ে ধরে বলল, ‘তুমিই আমার উদ্ধার কর্তা... আমি এবার কোথায় যাব?’ পটলা বলল, ‘আমি আর আমার এই তেল-বাঁশ তোমাকে বাঁচাইনি, বাবা-মাকে গালাগাল দিল বলেই...’ , পটলা মেয়েটিকে আরও অনেক কথা বলল, আর সেদিনের ঝোপের কথাও জানাল... মেয়েটি তার অবস্থার কথা বলল... সে তার মাকে বাঁচানোর জন্যই এত জঘন্য কাজ করে আসছে ... মেয়েটি কথা দিল, পটলা যদি ওকে মেনে নেয়, তাহলে আর এই কাজ করবে না... এবার পটলা খানিক চুপ... তারপর সে তার তেল মাখানো বাঁশটিকে সেখান থেকে নিয়ে চলে এল রেস্টুর‌্যান্টের ঠাকুর ঘরে, মা কালির চরণের কাছে গিয়ে, ‘হে মা...! বায়োস্কোপের বাঁশ-তেল তাহলে সত্যি ... !’,  বলেই হো হো হো করে আনন্দে হাসতে লাগল।