Thursday, May 14, 2020

ছোটদের গল্প - বিট্টুর কেরামতি



রাজকুমার ঘোষ  # 14.05.2020

-কিরে  ঘুমিয়ে পড়, এখনো ঘুমোসনি? কি জ্বালায় ছেলেটাসকালে উঠে স্কুলে যেতে হবে তো নাকি উঠতে না পারলে মার খাবি
মাএর বকুনি খেয়ে বিট্টু পাশ ঘুরিয়ে চোখ বুজে ঘুমোবার চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুম আসছে না ওর পেট যে গুড় গুড় করছে ভীষণ পেট ব্যাথা করছে পটি যাবার কথা ভাবছে কিন্তু ওর মা যে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে মাকে ডাকলেই জোর বকুনি দেবে
আসলে হয়েছে কি, চারদিন আগে বিট্টু পেটের ব্যাথায় কাবু ছিলো উলটো পালটা খেয়ে যা হয় আর কি আমাশা হয়ে গিয়েছিলো ডাক্তার দেখিয়েছিল স্কুলেও যায়নি সে একটু ভালোও হয়েছিল কিন্তু আজ ওর বাড়িতে মামা-মামি এসেছিল সাথে ওর দুটো মামাতো ভাইও এসছিল রোববারের দিন বেশ জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হয়েছে ওর প্রিয় জিনিস ফিস কাটলেট আনা হয়েছিল ওর মা ওকে বার বার বারণ করেছিল,
-        বাবু, বেশি খাসনি ফিস কাটলেট তোর শরীর ভালো না এরপর যদি পেটের ব্যাথা হয়, দেখিস কি করি আমি  
কিন্তু তারপরেও বিট্টু লোভ সামলাতে পারেনি প্রায় চারটে ফিস কাটলেট সাঁটিয়েছে সাথে অন্যান্য খাবারও যেমন চিকেন তন্দুরি, মোগলাই একটু একটু করে খেয়েছে ব্যস সহ্য হয়নি ওসব খেয়ে ঘুমোনোর সময় যত পেট ব্যাথা ওর মাও জানেনা এখন যদি মাকে ডেকে বলে ওর এই অবস্থা, কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে ও ভয়ে চুপচাপ থাকে কিন্তু পেটের ব্যাথা যে বাড়তে থাকে এবং পটি পায় শেষমেশ ও সিদ্ধান্ত নিলো, যে ও একাই টয়লেটে যাবে আর চেপে রাখা যাবে না এইমুহূর্তে ওর মনে হচ্ছে টয়লেটটা বহুদূর পৌঁছতে পারবে তো? দুঃখে কাতর হয়ে বিট্টু পেটে হাত বোলাতে বোলাতে খাট থেকে নামতে গিয়ে মেঝেতে পড়ে গিয়ে কুপোকাত। শব্দ হলেও বিট্টু দেখলো ওর মা তখনো নাক ডাকছে। খানিকটা আস্বস্ত হয়ে পা টিপে টিপে পড়িমড়ি হয়ে টয়লেটের দিকে ছুটে গেলো। রান্নাঘরের পাশেই ছিলো টয়লেট। এই রান্নাঘরের মুখের দেওয়ালে ছিলো বড় একটা ঘড়ি। বিট্টুর  চোখ পড়ে বড় ঘড়ির তলায় দাঁড়িয়ে থাকা বিরাট ছায়া মূর্তির দিকে। তা দেখে বিট্টু পটির কথা ভুলে গেলো, টিভিতে দেখা বিরাট দৈত্যের কথা মনে পড়লো। বেশ ভয় পেয়ে কাতর হয়ে আর সহ্য করতে পারলো না বিট্টু। পটি পা বেয়ে গড়াতে লাগলো আর ঘামে তার পৈতে ভিজে গেলো। সেই বিচ্ছিরি অবস্থায় বিট্টু সোজা চলে গেলো ঘরে থাকা সোফার তলায় লুকোতে এবং দৈত্যকে লক্ষ্য করতে লাগলো এবং ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। তারপরেই একটা বিকট চিৎকার, ‘বাঁচাও গো কেউ আমায়, বাঁচাও... এ বাবা! কি সব লেপ্টে গেলো আমার লুঙ্গি আর জামায়, আর কি বিচ্ছিরি গন্ধরে বাবা”। এরপরেই ঝনঝনিয়ে পড়লো অনেকগুলো বাসন।
বিট্টূ ভয়ে সোফার ওপরে বসে পড়লো। আর বিকট শব্দতে বিট্টুর বাবা-মা’র ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ছুটে চলে এলো এই ঘরে, লাইট জ্বালতেই দেখে ঘরে ভয়াবহ অবস্থা। তাদের চোখ পড়লো প্রথমে বিট্টুর দিকে, বিট্টু বলে ওর মাকে,
-  মা আমায় তুমি ধরো। 
- ইস! একি করেছিস শয়তান ছেলে... আমাকে জ্বালিয়ে খেয়ে নিলো। দাঁড়া, বেয়াদপ তোকে দেখাচ্ছি  মজা।
- মা, দেখো ওদিকে দৈত্য!
বিট্টুকে মারতে যাবে কি! সোফাও পটিতে যাতা অবস্থাগন্ধতে টেকা দায়। বিট্টুর কথায় এরপর দু’জনেরই চোখ পড়ে একটু দূরে থাকা একটা ষণ্ডামার্কা লোকের দিকে। তারা দেখে লোকটা পুরো পটির সাথে লেপ্টে গেছে এবং স্লিপ খেয়ে হড়কে গেছে রান্নাঘরে থাকা থালা বাসনের দিকে আর তার ঠেলায় থালা বাসন গুলো সব পড়ে গেছে। লোকটা ভেউ ভেউ করে কাঁদছে আর বলছে –
-        আমাকে বাঁচাও, কি সব লেপ্টে আছে আমার সাথে। পুরো হড়কে গেছি। আর উঠতে পাচ্ছি না। কোমড়ে প্রচন্ড লেগেছে।
-        তুমি কে? এতো রাতে কি করতে এসেছো  এখানে? দাঁড়াও পুলিশকে ফোন করছি।  - বিট্টুর বাবা বললো।
(২)
আসলে হয়েছিল কি? একটু ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক –
বিশে নামে এক চোর, সব কিছু খেয়াল রেখেছে আজ সকাল থেকে। বিট্টুদের বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এসেছে, তাই সকাল থেকে ওদের ব্যস্ততা থাকবে। সবাই ক্লান্ত হয়ে রাতে নিশ্চিন্তে গভীর ঘুমে থাকবে। সুযোগ আজই, ওদের বাড়িতে ঢুকে সব কিছু সাবাড় করারযথারীতি প্রস্তুতি নিয়ে বিশে হানা দেয় বিট্টুদের বাড়ি। প্রথমে পাঁচিল টপকায়। তারপর ওদের বারান্দায় প্রবেশ করে। তারপর সদর দরজার প্রায় পাশেই জানলার ঝড়ঝড়ে রডগুলো কাটে করাত দিয়ে এবং সন্তর্পনে প্রবেশ করে কমন ঘরে এবং পাশেই রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রান্নাঘরের সামনে একটা বড় দেওয়াল ঘড়ি আছে তার নিচে এসে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে। ঠিক সেই সময়েই বিট্টু রান্নাঘরের পাশে টয়লেটের দিকে ছুটে যায়। আর বিট্টুর চোখে দৈত্যর ছায়ামূর্তি হিসাবে নজরে পড়ে যায়। 

 (৩) 
বিট্টুর বাবা পুলিশকে কল করতেই থানার ওসি সদলবলে এসে গেলো। তারপর ষণ্ডামার্কা মূর্তিমানকে দেখেই ওসি বলে উঠলেন,
-        এযে বিশে চোর!
তারপরই ছড়ার স্টাইলে ওসি বললেন,
“বারেবারে পুলিশকে তুই  দিতিস চোখে ধুলো
পটিতে আজ লেপ্টে গেছিস ওরে ব্যাটা হুলো”
অট্টহাস্যে ওসি এবার বাকি সহকর্মীদের আদেশ করলেন,
“বিশে’কে চেপে ধরে পড়াও হাতকড়ি
ব্যাটা এবার চালান হবে। বলো, বলহরি”  
তারপর আনন্দে আহ্লাদ হয়ে বিট্টুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ভয় কেন বিট্টুবাবু ধরো আমার হাত
তুমি হলে আসলি হিরো, করলে তুমি মাত।“
পুলিশেরা ঐ অবস্থায় বিশেকে পাঁচাকোলা করে সেখান থেকে নিয়ে চলে গেলো। ওসি এবার বিট্টুর বাবা-মা কে বললেন,
-        বিট্টু কে একদম বকবেন না, ও যে আজ কি কেরামতি করেছে আপনাদের কোনো ধারণাই নেই। এই বিশে’কে কেউ ধরতে পারছে না । অনেকগুলো চুরির  কেস ওর নামে আছে। প্রায় তিন চারটে থানার পুলিশ ওকে খুঁজছে। আপনারা ওকে পরিস্কার করিয়ে দিন। আর ওকে বকবেন না
অগত্যা বিট্টুর মা ওসির কথা শুনলেন। ওসি চলে গেলেনতারপর বিট্টুকে পরিস্কার করিয়ে দিলেন। কিছু না হলেও বিট্টুর বাবা-মা বিট্টুর অজান্তেই এই কেরামতি মেনে নিলেন। তা নাহলে বিরাট ক্ষতি হয়ে যেতো সেটা ওনারা বুঝেছেন।

সমাপ্ত    

No comments:

Post a Comment