রাজকুমার ঘোষ -
সাধ করে দাদু নাতনীর নাম রেখেছিলেন ‘ইশানী’, কিন্তু মডার্ণ
যুগের বন্ধুদের পাল্লায় পরে নামটা ইশুতে এসে ঠেকেছে… ইশু হলো
রক্ষণশীল বনেদী পরিবারের মেয়ে । ইশুর মা বেশ ধার্মিক মহিলা, তেত্রিশ কোটি
দেবদেবীর সবাই ওনার আরাধ্য । ইশুকেও তিনি
নিজের মতো করে ঠাকুর দেবতাদের একনিষ্ঠ ভক্ত করে
তুলেছিলেন । ঈষুর অটল বিশ্বাস যে, মন দিয়ে শিবের পূজা
করলেই শিবঠাকুরের মত বর পাওয়া যাবে । এ নিয়ে ওর বান্ধবীরা খুব
ঠাট্টা-তামাশাও করতো । সুন্দরী ইশুর ওপর অনেক ছেলের দৃষ্টি থাকলেও ইশুর
চোখে মডার্ণ শিবঠাকুর ছিল ওদের কলেজের বিক্রম, ওরফে ভিকি । ভিকি কলেজে আসে
চার-চাকার গাড়ি নিয়ে । অন্যান্য বান্ধবীদের মতো ইশুও ঐ ভিকির প্রেমে
পাগল ছিল । সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, বিমল ইশুকে খুব ভালোবাসতো ।
বিমল ওদের পাড়াতেই থাকে, পড়াশোনায় ভালো । নিজের যোগ্যতায় সে একটা ভালো
চাকরীও করছে । বিমল ইশুকে তার মনের কথা জানিয়েছিল, কিন্তু ইশু জবাবে একটা জোরালো
থাপ্পর মেরেছিল । বিমল খুব আঘাত
পেলেও ইশুকে মন থেকে সরাতে পারেনি । ওদিকে নিষ্ঠাভরে শিবের সাধনা করে
ইশু নিশ্চিত ছিল যে ভিকিকে সে তার বর হিসাবে পাবেই । তাই
ওরা খুব ঘনিষ্ট ভাবে মেলামেশা শুরু করে দিয়েছিলো । ভিকি খুব সহজেই
ইশুর শরীরটা অধিকার করে নিয়েছিল,কিন্তু ইশুকে বিয়ে করতে
চায় নি,
সেরকম কোন ইচ্ছাই ওর ছিল না । ইশুর বাবা-মা মেয়ের মুখ চেয়ে ওদের
বিয়ের জন্য ভিকির বাড়িতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ভিকির পরিবারের কেউই নূন্যতম
সম্মানটুকুও দেয়নি, কথা বলা তো দূর অস্ত । এরপর নানা ঘাত প্রতিঘাত
অতিক্রম করে ইশুর বিয়ে ঠিক হল, আর, বিয়ের দিনেই ইশু
জানতে পারলো তার হবু বর হলো সেই বিমল, যাকে ও অপমান
করে তাড়িয়ে দিয়েছিল । আর বুঝতে পারল বিমল হল সেই নীলকণ্ঠ যে ওর সমস্ত কিছু
জেনেও,
ভালোবেসে ওকে আপন করে নিচ্ছে । ওর শিবপূজো
এতদিনে তবে সার্থক হল ! ..
প্রকাশিত - প্রেরণা সাহিত্য পরিবার, ২০১৫
প্রকাশিত - প্রেরণা সাহিত্য পরিবার, ২০১৫
No comments:
Post a Comment