Monday, November 5, 2018

অণুগল্প - মডার্ণ শিব

রাজকুমার ঘোষ - 


সাধ করে দাদু নাতনীর নাম রেখেছিলেনইশানী’, কিন্তু মডার্ণ যুগের বন্ধুদের পাল্লায় পরে নামটা ইশুতে এসে ঠেকেছেইশু হলো রক্ষণশীল বনেদী পরিবারের মেয়ে । ইশুর মা বেশ ধার্মিক মহিলা, তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর সবাই ওনার আরাধ্য ইশুকেও তিনি নিজের মতো করে ঠাকুর দেবতাদের একনিষ্ঠ ভক্ত করে তুলেছিলেন । ঈষুর অটল বিশ্বাস যে, মন দিয়ে শিবের পূজা করলেই শিবঠাকুরের মত বর পাওয়া যাবে । এ নিয়ে ওর বান্ধবীরা খুব ঠাট্টা-তামাশাও করতো । সুন্দরী ইশুর ওপর অনেক ছেলের দৃষ্টি থাকলেও ইশুর চোখে মডার্ণ শিবঠাকুর ছিল ওদের কলেজের বিক্রম, ওরফে ভিকি । ভিকি কলেজে আসে চার-চাকার গাড়ি নিয়ে । অন্যান্য বান্ধবীদের মতো ইশুও ঐ ভিকির প্রেমে পাগল ছিল । সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, বিমল ইশুকে খুব ভালোবাসতো । বিমল ওদের পাড়াতেই থাকে, পড়াশোনায় ভালো । নিজের যোগ্যতায় সে একটা ভালো চাকরীও করছে । বিমল ইশুকে তার মনের কথা জানিয়েছিল, কিন্তু ইশু জবাবে একটা জোরালো থাপ্পর মেরেছিল । বিমল খুব আঘাত পেলেও ইশুকে মন থেকে সরাতে পারেনি । ওদিকে নিষ্ঠাভরে শিবের সাধনা করে ইশু নিশ্চিত ছিল যে ভিকিকে সে তার বর হিসাবে পাবেই । তাই ওরা খুব ঘনিষ্ট ভাবে মেলামেশা শুরু করে দিয়েছিলো । ভিকি খুব সহজেই ইশুর শরীরটা অধিকার করে নিয়েছিল,কিন্তু ইশুকে বিয়ে করতে চায় নি, সেরকম কোন ইচ্ছাই ওর ছিল না । ইশুর বাবা-মা মেয়ের মুখ চেয়ে ওদের বিয়ের জন্য ভিকির বাড়িতে গিয়েছিলেন, কিন্তু ভিকির পরিবারের কেউই নূন্যতম সম্মানটুকুও দেয়নি, কথা বলা তো দূর অস্ত । এরপর নানা ঘাত প্রতিঘাত অতিক্রম করে ইশুর বিয়ে ঠিক হল, আর, বিয়ের দিনেই ইশু জানতে পারলো তার হবু বর হলো সেই বিমল, যাকে ও অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল । আর বুঝতে পারল বিমল হল সেই নীলকণ্ঠ যে ওর সমস্ত কিছু জেনেও, ভালোবেসে ওকে আপন করে নিচ্ছে ওর শিবপূজো এতদিনে তবে সার্থক হল ! ..

প্রকাশিত - প্রেরণা সাহিত্য পরিবার, ২০১৫ 

No comments:

Post a Comment