Thursday, March 12, 2020

বড় গল্প - স্বপ্ননীল

রাজকুমার ঘোষ 

(১)
অনেকেই আছে যারা অজানা অচেনা স্বপ্ন নিয়ে জীবনটাকে কাটাতে ভালোবাসে । রেখাও স্বপ্ন দেখে। তার স্বপ্ন দেখার ধরণ অবশ্যই তার হৃদয়ের ছোট্ট প্রকোষ্ঠ থেকে উদ্ভূত। স্কুলে পড়া থেকেই সে স্বপ্ন দেখে সুন্দর দেখতে এক স্বপ্ন পুরুষ তার কাছে প্রতিদিনই আসে এবং তার হাত ধরে তাকে নিয়ে যায় অনেক দূরে... সেই স্বপ্ন পুরুষের নাম দিয়েছিল সে স্বপ্ননীল... সে মনে মনে তার স্বপ্ন পুরুষকে নীল আকাশের মাঝে সর্বদা বিরাজ করতে দেখে, তাই হয়ত এই নাম । এই স্বপ্ননীলের মুখটা তার মনের মধ্যে একদম বসে আছে। কোনভাবেই তা ভোলার নয়। এইভাবে রেখা তার স্বপ্ননীলের মধ্যেই আচ্ছন্ন থাকে । নিয়মের কালপ্রবাহে রেখাও স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে পা রাখল। কিন্তু রেখার মনমন্দিরে তার স্বপ্ননীল আরো দানা বেঁধে বসে আছে, সুন্দরী রেখার পেছনে কত ছেলেরাই যে ঘোরাঘুরি করে তাতেও তার বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ নেই। কেননা সে কারোর মধ্যে তার স্বপ্ননীলকে খুঁজে পায় না। কাউকে তার ভালোই লাগে না। তার বাবা-মা এর কাছে ওর বিয়ের জন্যে অনেক প্রস্তাব আসে, ভালো ভালো প্রতিষ্ঠিত পাত্রের সম্বন্ধ আসে কিন্তু ও সব নাকচ করে দেয় । রেখা পরিস্কার ভাবে ওর বাবা মাকে জানিয়ে দেয়, ওর স্বপ্ননীলের মত কাউকে না পেলে ও বিয়েই করবে না। বাবা মা মেয়ের এই পাগলামীতে চিন্তায় পড়ে যায়। কিছুই করতে পারে না। 
 
(২)
রেখা তার বাবা-মা এর সাথে ভারতবর্ষের অনেক জায়গায় ঘুরে এসেছে । উত্তর ভারত, পূর্ব ভারত তথা দক্ষিণ ভারতের কেরালা, চেন্নাই, ভাইজ্যাগ, কন্যাকুমারী সব জায়গায় ঘুরেছে। ওর বাবা রেলে চাকরির সুবাদে অনেক পাশ পেয়ে থাকেন ঘোরার জন্য, তারই ফলে রেখার অনেক জায়গায় ঘোরা হয়ে গেছে । বছর দুই আগে ওরা মুম্বাই, গোয়া ঘুরে গেছিল । তবে ওর মা এর ইচ্ছা ছিল সপরিবারে জম্মুর কাটরাতে গিয়ে পায়ে হেঁটে মাতা বৈষ্ণোদেবীর দর্শণ করবেন । সেই ভাবনা মাথায় নিয়ে রেখার বাবা যথারীতি ট্রাভেল কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির দর্শণ করে জম্মুর কাটরাতে মাতা বৈষ্ণোদেবী মন্দির দর্শণে যাবেন মনস্থির করলেন। বেড়িয়েও পড়লেন। ঠিক অক্টোবরের শেষ দিকে একটু শীতের আমেজ, রেখা তার বাবা-মার সাথে স্বর্ণমন্দিরে এলো... এখানে এসে ওদের মন ভরে উঠলো। সকল ভক্তের এত নিষ্ঠা এবং মন্দিরের পরিবেশ দেখে মনে হল এখানে আসা স্বার্থক। এত পবিত্র জায়গায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়ে রেখার মা আবেগে কেঁদেই ফেললেন। 

অমৃতসরে দুদিন কাটানোর পর রাতের বাসে ওরা কাটরার পথে যাত্রা শুরু করল। মনে মাতা বৈষ্ণোদেবী দর্শণের ইচ্ছা মাথায় রেখে রেখা ও তার বাবা-মা বাসের স্লীপার কোচে উঠে শুয়ে পড়ল। রেখাও মনে মনে বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করল। সে বাসের একটি কোচে একা শুয়ে আছে । বাস ছুটে চলেছে কাটরার দিকে, বাসের দুলুনিতে চোখে ঘুম না এলেও কোন এক ঘোরে রেখার দুই চোখ স্বপ্নের রাজ্যে আচ্ছন্ন হয়ে গেল... সে স্বপ্নে আবার তার স্বপ্ননীলকে দেখতে পেল। সে দেখতে পেল স্বপ্ননীল এই বাসে তারই পাশে শুয়ে আছে, আবেশে তার মন-প্রাণ কেমন যেন হয়ে উঠল। সেও স্বপ্ননীলকে জড়িয়ে ধরে বলেই ফেলল, “কোথায় ছিলে এতদিন?... তোমাকে কত খুঁজেছি, তুমি জানোনা... আমাকে আরো জড়িয়ে ধর, আমাকে আরো ভালোবাসো...”  হঠাৎ করে রেখার ঘোর কেটে গেল বাসের ব্রেক কষায়। দুই চোখ উন্মেলিত হতেই সে দেখতে পেল সত্যিই স্বপ্পনীল তার পাশে আছে। অবিকল তার স্বপ্নে দেখা নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সেই স্বপ্নের পুরুষ স্বপ্ননীল... রেখা কিছু বলতে গেল কিন্তু তার আগেই অচেনা স্বপ্ননীলের মত দেখতে আগন্তক তার মুখ চেপে ধরে বলল, “যাদা চিল্লাওগি তো চাকু ঘুসা দুঙ্গা”... রেখা অবাক হয়ে গেল, তার সাথে ভয়ও পেয়ে গেল... বাস থেমেই ছিল, অচেনা আগন্তুক তার কোচ থেকে বেড়িয়ে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। হতভম্ব রেখা লজ্জা, অপমানে দুই হাতে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো...... 

(৩)
সুন্দর ত্রিপাঠী, বিহারের ছাপড়া থেকে কজন বন্ধুকে নিয়ে সে অমৃতসরে বেড়াতে এসেছে। বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে অমৃতসর থেকে কাটরার দিকে যাবার উদ্দেশ্যে বন্ধুদের সাথে ফুর্তি করতে করতে রাত্রীকালীন বাসে উঠে পড়ে । বাসে স্লীপার কোচে না থাকায় ওরা সীটে বসেই যাত্রা শুরু করল। হৈ হুল্লোর করতে করতে সুন্দর দেখলো একটি মেয়ে তার বাবা-মার সাথে একই বাসে উঠেছে এবং মেয়েটি আলাদা করে একটি স্লীপার কোচে উঠে শুয়ে পড়েছে । সেই মেয়েটিকে দেখে সুন্দর তার বন্ধুদের বলে, “ক্যায়া পটাকা হ্যায় ইয়ার... আগর ইয়ে পটাকা মেরে বাহমে হোগা তো মস্ত রহেগা”... বন্ধুরা ওর কথা শুনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল এবং এগিয়ে যাওয়ার সাহসও দিল। সুন্দর এরপর কোনকিছু না ভেবে বন্ধুদের থেকে চ্যালেঞ্জ নিয়ে মেয়েটির ওই স্লীপার কোচে অতি সন্তর্পনে উঠে পড়ল। তারপর মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে থাকল । মেয়েটিও অবাক করে দিয়ে সুন্দরকে জড়িয়ে ধরে বলে, “কোথায় ছিলে এতদিন?... তোমাকে কত খুঁজেছি, তুমি জানোনা... আমাকে আরো জড়িয়ে ধর, আমাকে আরো ভালোবাসো...” সুন্দর, মেয়েটির কথাগুলোর কিছুই মাথা মুন্ডু বুঝতে পারেনি । বাস থামতেই মেয়েটি চিৎকার করতে যাবে কি সুন্দর ওর মুখ চেপে ধরে বলে, “যাদা চিল্লাওগি তো চাকু ঘুসা দুঙ্গা”... এই বলে সে কোচ থেকে বেড়িয়ে বন্ধুদের নিয়ে তড়িঘড়ি বাস থেকে নেমে ছুটে পালিয়ে যায় ।      
(৪)
সকাল ৭টায় বাস কাটরায় পৌঁছে যায়। রেখা ওর বাবা-মার সাথে কাটরার হোটেলে চলে আসে। পাহাড়ে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিবেষ্টিত কাটরাতে যথেষ্ট ঠান্ডার আবহাওয়া... তার ওপর বৃষ্টি পড়ে বেশ শীত শীত অনুভব করছে, হোটেলে আসার পথে রেখা চারিদিকে তাকিয়ে দেখল, তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্য নয়, গতকাল রাতের আগন্তুককে খোঁজার জন্য ওর চোখদুটি ভীষণ ব্যস্ত থাকল । এতো শীতেও রেখার মন ও প্রাণে যেন আগুনের ফুলকি উদ্বৃত্ত হচ্ছে। গতকাল রাতের ঘটনায় সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে তার মা বাবাকে কিছুতেই গতকালের ঘটনা বলতে পারছে না। গতকালের সেই অচেনা আগন্তুককে তার স্বপ্ননীলের মতোই দেখতে, যে তার মনের সিংহাসনে কতদিন ধরে উপবিষ্ট হয়ে আছে... অথচ তার স্বপ্ননীলরূপী এই আগন্তুক তার সাথে এমন ব্যবহার করল কেন? তার মনের অবস্থা বোধ হয় মা খানিকটা বুঝতে পেরেছেন, তাই হয়ত, “কি হয়েছে রে তোর?” – “কিছু না মা”- এই বলে রেখা এড়িয়ে গেছে । সে হোটেলের ছাদে  চলে আসে, আকাশের দিকে তাকিয়ে মাতা বৈষ্ণোদেবীর উদ্দেশ্যে কাতর হয়ে প্রার্থনা করে, “হে মাতা এখনো পর্যন্ত জানিনা তুমি কোথায় আছো ? তোমার কাছে যাবো তো বটেই... কিন্তু মাতা, আমার কেন এমন হল ? আমার অপরাধ কি স্বপ্ননীলকে ভালোবাসা ? যদি তাই হয় মাতা তাহলে আমাকে তুমি শাস্তি দিও...” বলেই সে ভীষণ ভাবে কাঁদতে লাগলো। 
(৫)
ঐ দিন রাত ১১টায় রেখা মনের মধ্যে কয়েক মন পাথরের বোঝা নিয়ে ও বাবা-মাকে সাথে নিয়ে বৌষ্ণোদেবী মাতা দর্শনে হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়ল। তার আগে অবশ্য ওর বাবা বৈষ্ণোদেবী মাতা দর্শনের পড়চা কেটে রেখেছিলেন। কাটরার মার্কেটের রাস্তা ধরে ওরা এগোতে লাগলো... এতো রাতেও মার্কেটে অনেক লোকের অবস্থান। হাঁটতে হাঁটতে ওরা অটোস্ট্যান্ডে চলে এল, সেখান থেকেই বলতে গেলে যাত্রা শুরু... মিলিটারিরা তাদের পড়চা দেখে এবং সবকিছু চেক করেই যাবার অনুমতি দিল । এর পরেই পাহাড়ি রাস্তা ধরে যাত্রা শুরু । ওরা ক্রমশঃ ওপরে দিকে উঠতে  লাগলো। শয়ে শয়ে দর্শনার্থী মাতাদির দর্শনে যাচ্ছে, আবার অনেকে মাতার দর্শন করে ক্লান্ত শরীরে ফিরছে। প্রত্যেকের মুখেই ভক্তি ও আনন্দের বর্হিপ্রকাশ, “জয় মাতাদি, জয় মাতাদি... জোর সে বোলো... জয় মাতাদি... প্যার সে বোলো... জয় মাতাদি...” রেখার ভীষণ ভালো লাগলো । সে মনের মধ্যে জমে থাকা সমস্ত পাথরগুলিকে এক ঝটকায় ফেলে দিয়ে “জয় মাতাদি, জয় মাতাদি” উল্লাসে এগিয়ে চললো মাতার দিকে। সাথে তার বাবা-মাতো ছিলোই। পাহাড়ী রাস্তা যতই উঁচু হোকনা কেন এবং রাতে হাঁটা ক্লান্তি নিয়ে আসলেও রেখা কিছুতেই দমবে না স্থির করল। সে অবিচল লক্ষ্য নিয়ে একমনে মাতাজীর উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে । তার বাবা মা ওর থেকে অনেক পিছিয়ে পড়েছে । কিন্তু কোন আসুবিধাই নেই... এই রাস্তা সকলেরই আপন... মাতাজীর উদ্দেশ্যে প্রত্যেকে নিজের মত করে আসতেই পারে... কেউ সাথে থাকবে তার কোনো মানে নেই। রেখা যতই এগোতে থাকে ওর মনে হয়, “রাতের এই রাস্তা কত সুন্দর, চারিধারে আলোর ঝিকিমিকি। পাহাড়ের ওপর থেকে নিচের দিকে তাকালে কাটরার টাউনকে মনে হচ্ছে অসংখ্য জোনাকির মেলা... কি সুন্দর মহিমা”... ক্লান্তি লাগলে সে মাঝে মাঝেই রাস্তার পাশে থাকা বিশ্রামের জন্য বেঞ্চে বসে পড়ছে আর স্টল থেকে পারলে চা বা কফি পান করে নিচ্ছে । আর মাঝে মাঝে পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছে ওর বাবা মা আসছে কিনা... কখনো ও দেখতে পাচ্ছে আবার কখনো পাচ্ছে না । এইভাবেই রেখা ওর বাবা মাকে সাথে নিয়ে ভোর ৪টের সময় পৌঁছে গেল মাতাজীর দোরগোড়ায় । প্রসাদ কিনে নিয়ে দর্শনার্থীদের লাইনে ওরা সকলে দাঁড়িয়ে গেল । 

মিলিটারির পাহাড়ায় পরিবেষ্টিত মাতাজী। তাই তাদের চেক্‌ করার ধরণও খুব সাঙ্ঘাতিক। রেখার বাবা ওদের সাথে থাকা সমস্ত জিনিস ওখানে লকার সিস্টেমে একটা জায়গায় রেখে এসেছে । মিলিটারিদের কয়েকদফা চেক করার পর ওরা প্রবেশ করল গুহার মধ্যে থাকা মন্দিরে, কি সুন্দর মায়ের রক্ষণাবেক্ষণ এখানে, দেখে মন ভরে গেল । ৭টার সময় মাতাজীর আরতি হয়। পুরোহিতরা মাকে সাজিয়ে ভক্তিমূলক গানের মাধ্যমে  আরতি করেন । প্রায় ২ ঘন্টা আরতি দেখার পর রেখা ও ওর বাবা মা মন্দিরের ভেতরে মা এর মূর্তি দর্শণ করল। গঙ্গার জলপ্রবাহ ওখান দিয়ে যায় তারও দর্শণ মিললো। কি শীতল জলের প্রবাহ ... তারই ছোঁয়া অনুভব করল ওরা। সেই জলপ্রবাহের কিছু কণা মন্দির সংলগ্ন মার্বেলের মেঝেতে গড়িয়ে এসেছে, মেঝেতে কার্পেট থাকায় সেই কার্পেট ভিজে যায়, ওরা খালি পায়ে হাঁটায় সেই হাড়কাঁপানোর ঠান্ডার পরশ ওরাও পেলো, ওই কার্পেটে পা রাখাই দায়। তারই মধ্যে ওরা সবকিছু দর্শণ করে ঠিক ৯টায় ওখান থেকে ফেরার পথ ধরলো । মাতাজীর মন্দিরকে ফেলে ওরা অনেক দূর হাঁটতে হাঁটতে চলে এসেছে । রেখার মাএর পায়ে এবার একটু টান ধরলো, তাই রেখা ওর মাকে ধরে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলো। দূর থেকে বৈষ্ণোদেবীর মন্দির কে ভারী সুন্দর দেখতে লাগছে। সকালের আলোতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে মাতাজীর মন্দির এক অপরূপ শোভা বিরাজ করছে । রেখা বিভোর হয়ে সবকিছু দেখছে। 

(৬)
হাঁটতে হাঁটতে রেখা তার বাবা মার সাথে একটি মেডিক্যাল কাম্পের কাছে চলে এসেছে, যেখানে দর্শনার্থীদের ফ্রী মেডিক্যাল চেক আপ করা হয়। ওরা দেখলো ঐ ক্যাম্পের কাছে জনকোলাহল সহ অনেক দর্শণার্থীর ভীড়। ওরা ক্যাম্পের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে... তারই মধ্যে রেখা ওই ভিড়ের মধ্যে সেদিন রাতের অচেনা আগন্তুক, ওর স্বপ্ননীলকে দেখে চিনতে পারলো । কিন্তু একি অবস্থা তার স্বপ্ননীলের! একেবারে মরণাপন্ন অবস্থা যে ওর স্বপ্ননীলের... ও ওর মায়ের হাত ছেড়ে ছুটে গেল ক্যাম্পের দিকে। ওর বাবা মা রেখার এই অদ্ভূত আচরণে অবাক তো হলোই, ভিষণ রকম অসন্তুষ্ট হলেন। দুজনেই চিৎকার করে উঠলেন, “রেখা... রেখা... মাতাজীর স্থানে একি অভব্যতা? চলে আয় বলছি...”। রেখা কর্ণপাত না করে সেই আগন্তুকের উদ্দেশ্যে চলে গেল এবং জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো আর এক মনে “জয় মাতাদি... জয় মাতাদি” বলতে লাগলো । আশেপাশের দর্শর্নাথীরাও ওর বলার সাথে তাল মেলাতে লাগলো, “জোর সে বোলো... জয় মাতাদি... প্যার সে বোলো... জয় মাতাদি...”। আগন্তকের পাশে থাকা এক সাথি বন্ধু ওকে বললো, “বহিনজি, ইসকা নাম সুন্দর ত্রিপাঠী, এ যো গলতি কি, মাতাজী উসকা সাজা দে দিয়া” ... রেখা জানতে পারলো, সুন্দর সিঁড়ি বেয়েই উঠছিল, হঠাৎ করে ওর পা স্লিপ করে যায় এবং একটা ধাপ নিচে পড়ে যায়, যে ধাপে প্রায় ৫০টা সিঁড়ি ছিলো। মাথায় আঘাত লাগে এবং অজ্ঞান হয়ে যায়, তারপর ওর বন্ধুরা ও কিছু সহৃদয় দর্শণার্থীরা ওকে তুলে এই ক্যাম্পের কাছে নিয়ে আসে। এদিকে রেখার বাবা-মা মেয়ের এইসব কান্ডকারখানা দেখে খুবই রেগে গেলেন এবং উত্তেজিত হয়ে রেখার বাবা জিজ্ঞেস করলেন, “কে এই ছেলেটি? কি সম্পর্ক এর সাথে?” বাবার বলিষ্ঠ গলার এই প্রশ্নের উত্তরে রেখা একটুও বিচলিত হল না... এই রেখা একদম অন্যরকম, একেবারে অচেনা। রেখা ধীর হয়ে জানাল, “আমার স্বপ্নের সেই স্বপ্ন পুরুষ, স্বপ্ননীল... যাকে আমি এতদিন ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি, মাতাজীর আশীর্বাদে আজ ওকে আমি এখানে পেয়ে গেছি... প্লীজ বাবা, কিছু কর, আমি আমার স্বপ্ননীলকে কিছুতেই হারাতে চাই না” এই বলে রেখা দীপ্ত কন্ঠে মাতা বৈষ্ণোদেবীর মন্দির যে দিকে আছে সেই দিকে তাকিয়ে “জয় মাতাদি...জয় মাতাদি” বলতে থাকলো। তার কন্ঠের সাথে মেলাতে লাগলো আশেপাশের দর্শণার্থীরাও “জোর সে বোলো... জয় মাতাদি... প্যার সে বোলো... জয় মাতাদি...”এতোগুলো কন্ঠের মাঝে আস্তে আস্তে অস্ফূট স্বরে “জয় মাতাদি...জয় মাতাদি” বলে গলা মেলাতে লাগলো আগন্তুকরূপী সুন্দর । সবাই ওর দিকে তাকিয়ে রইল, রেখাও তার স্বপ্ননীলের দিকে তাকিয়ে দেখলো, স্বপ্ননীল তার দুই হাত জড়ো করে রেখাকে, “মুঝে মাফ করদো, মেরে গলতি কা সাজা মাতাজী নে মুঝে দে দিয়া... মুঝে প্লীজ মাফ করদো...” এই বলে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকলো। রেখা দূর থেকে মাতাজীর উদ্দেশ্যে প্রণাম জানিয়ে বললো, “ভগবান তোমাকে মাফ করে দিয়েছেন... আমার স্বপ্ননীল এখন পুরোপুরি সচ্ছা আদমি আছে”... সুন্দর ও ওর বন্ধুরা হেসে ফেললো রেখার কথা শুনে। এরপর রেখা ওর বাবা-মাকে সমস্ত ঘটনা জানায় এবং বলে, “বাবা-মা...আমি একেই বিয়ে করবো, তোমরা আপত্তি করো না”। প্রত্যুত্তরে ওর বাবা জানায়, “স্বয়ং মাতাজী যখন আপত্তি জানায় নি তো আমরা আপত্তি করার কে মা, তোর আর সুন্দরের ধুমধাম করে বিয়ে দেবো”। এরপর এঁরাও সকলের সমবেত কন্ঠে “জয় মাতাদি...জয় মাতাদি” বলে আনন্দ করতে লাগলো। আশে পাশের অনেকেও সমস্বরে সাথ দিলো। এদিকে সুন্দর রেখার হাত ধরে একসাথে ঘর বাঁধার আহ্বান জানালো । রেখাও তার মিষ্টি চোখের মধুর চাওনিতে সম্মতির আশ্বাস দিলো ।    
  (published in Padakkhep Blog magazine) ... all right reserved in this magazine.. @Rajkumar Ghosh

 

No comments:

Post a Comment